একটা রেলগাড়ি চলছে! গন্তব্য দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হতে উত্তরবঙ্গ, দূরত্ব প্রায় ছয়শত কিলোমিটার। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষে প্রায় পুরো রাত ধরে ছুটে চলা এই ছয়শত কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথে রেল সংশ্লিষ্ট নানান ঘটনা, অভিজ্ঞতা কিংবা চরিত্রের পাশাপাশি হুট করেই যদি বছর আটেক পূর্বে বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়া প্রাক্তন প্রেমিক এবং প্রেমিকার মধ্যে দেখা হয়ে যায় তবে উভয়ের মানসিক অবস্থা কিংবা তাদের মধ্যকার মিথষ্ক্রিয়া কি হতে পারে! কেমন হতে পারে তাদের মধ্যকার কথোপকথন কিংবা একটা দুঃসহ অতীতকে ঘিরে তাদের জবাবদিহিতার জায়গাগুলো! সীমান্ত এক্সপ্রেসে বসা দুইজন প্রাক্তন মানুষকে কেন্দ্রে রেখে পুরো রেল এবং রেলের নিয়মিত চরিত্র কিংবা ঘটনাগুলোকে এই দুজন মানুষের সাথে জুড়ে দিয়ে একটা অসাধারণ বয়ান হাজির করবার চেষ্টা করা হয়েছে উপন্যাসে। বর্ণিত বয়ানটি-ই যেনো একটা রেল ভ্রমণ! এই ভ্রমন পাঠককে কোথাও থামাচ্ছে, কোথাও তুলছে আবার কোথাও বা নামিয়ে দিচ্ছে। এই ওঠা, নামা কিংবা থেমে যাওয়ার মধ্যেই অতি সঙ্গোপনে লুকায়িত রয়েছে ব্যাক্তি জীবনের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, জীবন সংগ্রাম কিংবা নতুন করে স্বপ্ন দেখবার গল্পগুলো। মনুষ্য জীবনও যেনো উপন্যাসের এই বয়ানের বাইরের কিছু নয়। গতিশীল জীবনে গন্তব্যে ফেরার তাড়ার সাথে এখানে সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না আছে, নিয়মহীনতার সাথে আছে বাধা-বিপত্ত্বি আর প্রতিকূলতা। শত বাধা-বিপত্ত্বি আর প্রতিকূলতা মাড়িয়ে জীবন এগিয়ে চলে তার গন্তব্যপানে, ঠিক সীমান্ত এক্সপ্রেসের মত।
আসাদ রহমানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা দিনাজপুরে, যেখানে কেটেছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ষোল বছর। পড়াশোনার বাকী পর্ব সমাপ্ত হয়েছে ঢাকাতে, ঢাকা কমার্স কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে। নৃবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর অধ্যয়ন শেষ করবার পর তিনি নিজেকে একজন উন্নয়নকর্মী হিসেবে নিয়োজিত করবার পাড়াপাশি লেখালেখিতে মনোনিবেশ রেন, যার সূত্রপাত ঘটে সামহোয়্যার ইন ব্লগের হাত ধরে। 'অগ্নি সারথি' ছদ্মনামে লেখালেখি করা এই ব্লগার সর্বদা চেষ্টা করেছেন তার অর্জিত নৃবৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তার লেখনীতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কন্ঠস্বর তুলে নিয়ে আসবার। যার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৬ সালে তিনি বাংলাদেশ হতে ডয়েচ ভেলে কর্তৃক 'বেস্ট অফ অনলাইন এক্টিভিজম' এওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হন। লেখালেখিকে তিনি আন্দোলন হিসেবে বিবেচনা করেন এবং তিনি বিশ্বাস করেন লেখনীর মধ্য দিয়েই একদিন পৃথিবীর সকল মানুষের বিবেক জাগ্রত হবে, যে বিবেক মানুষের মধ্যে উঁচু-নিচু, ধনী-গরীব, নারী- পুরুষ সাদা-কালো সহ জাত-পাতের সকল বিভেদ খুঁচিয়ে দিয়ে একটা বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে দেবে যেখানে মানুষ পরিচিত হবে শুধুই মানুষ হিসেবে। লেখকের পূর্ব-প্রকাশিত উপন্যাস 'নজরবন্দী' পাঠক মহলে বেশ আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি উপন্যাস হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।