মানবমনের, মানবদেহের, মানব আবহের বিকট একটা গন্ধ আছে। এটা দুর্গন্ধ। মূলত মানবের কোনো সুগন্ধ নেই। ত্বাচপ্রতিবন্ধী যেমন স্পর্শ টের পায় না, তেমনভাবে আমরা এসব মনত্বাচ্য-দুর্গন্ধের স্পর্শ অনুভব করতে পারি না। আরও বিভিন্নরকম প্রতিবন্ধিত্বের কারণে দুর্গন্ধের দুর্গন্ধ বুঝতে পারি না, দুর্গন্ধের শব্দ শুনতে পাই না, পচা স্বাদ ধরতে পারি না। মনচোখে দেখতে পাই না দুর্গন্ধের বীভৎস রূপ। অনেক সময় দুর্গন্ধের দুর্গন্ধ, বীভৎস রূপ, কটু স্বাদ, বিকট শব্দ ধরতে পারলেও সেটাকে অপরিহার্য ধরে নিয়ে, নিয়তি ধরে নিয়ে দুর্গন্ধ যাপন করি, যাতন যাপন করি, চুপ করে থাকি। চুপকূপে ডুবে চুপজল পান করি। মানুষ জগতের সকল প্রাণীকে পায়ের তলে এনে ফেলেছে নৃশংসতা দিয়ে। মানুষেরা নিজেদের নাম দিয়েছে 'সৃষ্টির সেরা জীব'। তথাকথিত এই সেরা জীবের শ্রেষ্ঠত্বের চিহ্ন হলো নৃশংসতা। মানুষের তৈরি ভাষা দিয়ে মানুষের নৃশংসতার পরিমাণ ও প্রচণ্ডতা প্রকাশ করা অসম্ভবপ্রায়। সকল প্রাণী মানুষ দ্বারা অবমানিত, প্রতারিত, প্রতাড়িত, বিতাড়িত। সমস্ত জমির দলিল তৈরি করে ফেলেছে মানুষ নিজেদের নামে; এখন অন্য প্রাণীরা বাস করছে মানুষের জমিতে; এখন অন্য প্রাণীরা মানুষরাজের প্রজা; কারণ, তাদের হাতে জমির দলিল নেই। অন্য প্রাণীরা টিকে আছে নিজেদের জন্য নয়, তাদের টিকিয়ে রাখা হয়েছে মানুষের প্রয়োজনে। মাংস খাবার জন্য, চামড়ার স্যান্ডেল পাবার জন্য। মানুষ এতই নৃশংস যে, শুধু মিনিটখানেকের চোখের তৃপ্তির জন্য হাজার হাজার প্রাণীকে আজন্ম বন্দি করে রাখে চিড়িয়াখানায়। চিড়িয়াখানা হলো জীবিত প্রাণীদের গোরস্থান। যে-কোনো প্রাণী বা বৃক্ষ বা জড়পদার্থ দেখলেই মানুষের প্রথম চিন্তা- 'এটা আমার কি কাজে লাগবে? এটা আমার কী কাজে লাগবে? কতটুকু মাংস বা পালক বা দুধ বা লোম পাওয়া যাবে?