বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর এদেশ অদ্ভুতুড়ে আঁধারে নিমজ্জিত হয়ে যায়। বাম ঘরানার চরমপন্থী দলগুলোর ওপর নেমে আসে রাষ্ট্রীয় শ্বেতসন্ত্রাস। একই সময়ে পার্শবর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও নকশালবাড়ির লালসন্ত্রাসকে মোকাবিলার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারও চালাতে থাকে ভয়ানক দমন-পীড়ন। দুইদেশের তুখোড় একটা মেধাবী প্রজন্ম ধুলিসাৎ হয়ে যায় সামাজিক-রাষ্ট্রীয় অসূর্যলোকে। এই ইউটোপিয়ান তরুণ-তরুণীদের অনেকেই ইতিহাসের অসূর্যলোকে ঢাকা পড়ে যায়। তাদের পার্থিব প্রেম যৌনতা, মান-অভিমান, অস্তিত্ব সবকিছুই ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায়। ইতিহাসের নিকষ অন্ধকারের নানা উপাখ্যান এই আখ্যানে বয়ান হয়েছে। ইতিহাস তাদেরকে মনে রাখেনি অথচ তারা দেশপ্রেমিক ছিল। সুষম বন্টনে বিশ্বাস রেখেছিল, বুদ্ধির নখে শান দিয়েছিল। কাঁচা বয়সী ফ্যান্টাসিতে ভোগা এই তরুণ-তরুণীরা সবকিছুকে তুচ্ছ করে ধরেছিল অস্ত্র খোদ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। আমি বলছি না তারা সঠিক ছিল, কিন্তু তারা যে আক্রমণের শিকারে পরিনত হয়েছিল খোদ প্রতিক্রিয়াশীল পুঁজিবাদী চক্রের কালো থাবায়- এটা ধ্রুবসত্য! তারা একটা পরিবর্তন চেয়েছিল এটাও সত্য! কিন্তু তাদেরকে ভুল পথে চালিত করেছিল তাদেরই নেতৃস্থানীয়রা। এসবের সাতসতেরো এবং সর্বোপরি বিপ্লবীদের দীক্ষাপ্রাপ্ত একজন কিশোরীর সংগ্রামী জীবন, তার ধর্মগুরু, মোড়াল মাতুব্বর, স্বামী এমন কী মা কর্তৃক নিগ্রহের শিকার ও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চোখা নখরে ক্ষতবিক্ষত আখ্যান নিয়ে উপন্যাস 'অসূর্যলোক'।একটা কথা না বললেই নয়, আশির দশকে কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় ওই সব ইউটোপিয়ান তরুন-তরুনীদের অবাধ গতায়াত ছিল দুই দেশে। এরা পত্রপত্রিকা করত, স্বপ্নবাজ ছিল। পিছিয়ে পড়া মানুষকে নিয়ে তারা ভেবেছিল। তাদের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছিল একাত্তরেই। পরবর্তীতে ওই যোগাযোগ আরও গাঢ় হয়ে ওঠে।