২০২১ সালে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি। সে বছর আমার বয়স ছিল ৭১। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে। আমি ৭১ বছরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি লেখা আরম্ভ করেছিলাম 'আমার একাত্তর' গ্রন্থের জন্য। ২০২১ সালে বার্ধ্যক্যের কালো বারান্দায় বসে আমি দেখতে চেয়েছিলাম ২০/২১ বছর বয়সের এক রোমাঞ্চপ্রিয় স্বপ্নতাড়িত তরুণকে তার মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি, অংশগ্রহণ এবং সদ্যস্বাধীন স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ইতিবৃত্ত। একই সঙ্গে বলতে চেয়েছি সেই উত্তাল সময়েরও বিক্ষিপ্ত উপাখ্যান। মাঝখানে করোনার করালগ্রাসে ব্যক্তিগত লেখালেখি বাদ দিয়ে ব্যস্ত হতে হয়েছে সাংগঠনিক কাজে, মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার এক অন্য রকম যুদ্ধে। যে কারণে 'আমার একাত্তর শেষ করতে দীর্ঘ দু' বছর লেগেছে। '৬৯, '৭০, '৭১- বাংলাদেশের এবং পাকিস্তানের ইতিহাসের সবচেয়ে ঘটনা ও সংঘাতবহুল তিনটি বছর, যা গোটা উপমহাদেশের ইতিহাস-ভূগোল সব ওলটপালট করে দিয়েছে। সেই সময় আমি হিরন্ময় কৈশোর অতিক্রম করে উদ্দাম যৌবনের রোমাঞ্চকর অজানা সোপানে পদার্পণ করছি। আমার মানসগঠনের এই সময় ছিল আন্দোলন ও সংঘাতমুখর এমন এক ক্রান্তিকাল- যা অতীতে কখনও ঘটেনি, ভবিষ্যতেও ঘটার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। '৭১-এ আমাদের প্রজন্মের সুযোগ হয়েছিল বাঙালি জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায় প্রত্যক্ষ ও অংশগ্রহণ করার। '৭১-এ ইতিহাস আমাদের গৌরব ও আনন্দের পাশাপাশি একই সঙ্গে ধারণ করেছে অগৌরব ও বেদনার ঘটনাও। '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র অর্জন করেছি- এটি যেমন ইতিহাসের অমোঘ সত্য, আরও কঠিন সত্য হচ্ছে এই প্রাপ্তির জন্য আমাদের অপরিসীম মূল্য দিতে হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য তিরিশ লক্ষ মানুষের জীবনদান, পাঁচ লক্ষাধিক নারীর চরম নির্যাতন, শরণার্থীর তকমা নিয়ে এক কোটি মানুষের প্রতিবেশি ভারতে বিড়ম্বিত জীবনযাপন এবং দেশের অভ্যন্তরেও কয়েক কোটি অবরুদ্ধ মানুষের উৎকণ্ঠা ও বেদনা- পৃথিবীর অন্য কোনও জাতির স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে নজির পাওয়া যাবে না।
শাহরিয়ার কবির বাংলাদেশের একজন খ্যাতিনামা লেখক, সাংবাদিক, ডকুমেন্টরী চলচ্চিত্র নির্মাতা। ১৯৫০ খ্রীস্টাব্দের ২০ নভেম্বর তিনি ফেনীতে জন্মগ্রহণ করেন। লেখক হিসাবে তার প্রধান পরিচয় তিনি একজন শিশুসাহিত্যিক। তার নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রের মধ্যে জিহাদের প্রতিকৃতি অন্যতম।১৯৯২ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির বিরূদ্ধে কাজ করে চলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করে শাহরিয়ার কবির ১৯৭২ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় সাংবাদিক হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৯২ সাল পর্যন্ত নির্বাহী সম্পাদক পদে থাকেন। তিনি একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এর সাথে যুক্ত আছেন। শাহরিয়ার কবির বলেনঃ“ মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ধ্বংস করা যায় না। বাংলাদেশে অধিকাংশ সময় নেতৃত্ব দিয়েছে ৭১’র পরাজিত শক্তি। তারা মুক্তিযুদ্ধের সব কিছু ধ্বংস করতে চেয়েছে কিন্তু পারেনি। তিনি বলেন, দেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। মহাজোট সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করেছে। আমরা বিশ্বাস করি ২০১৩ সালের মধ্যে শীর্ষ স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব হবে।