পরিবারের ছোট সদস্য শেখ রাসেল তখন তার মায়ের ঘরে। ওই ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন জামাল ভাই, তার স্ত্রী রোজী জামাল, কামাল ভাইয়ের স্ত্রী সুলতানা কামাল, চাচা নাসের ও রমা। ওখানেও ঘাতকরা হানা দেয়। দরজা খুলে দেন রাসেলের মা। ভেতরের কাউকে না মারার অনুরোধ করেন। ওই ঘর থেকে রাসেলের সঙ্গে তার মা, শেখ নাসের ও রমাকে নিচে নিয়ে যাওয়া হয়। দশ বছরের রাসেল ঘুম ভাঙা চোখে সব দেখছে। কেঁপে কেঁপে উঠছে গুলির শব্দে। তার মাকে তার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ঘরে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ভেসে আসে গুলির শব্দ। ওই সময় শেখ জামাল, সুলতানা কামাল ও রোজী জামালের সঙ্গে রাসেলের মা ফজিলাতুন নেছাকেও হত্যা করা হয়। রাসেল, তার চাচা নাসের ও রমাকে নিচে নিয়ে যাওয়া হয়। লাইনে দাঁড় করানো হয়। তখন শেখ নাসেরকে অন্য একটি ঘরে গিয়ে বসতে বলে ঘাতকরা। ওখানে অফিসের সঙ্গে লাগোয়া বাথরুমে গুলি করা হয় তাকে। এদিকে লাইনে দাঁড়িয়ে শেখ রাসেল। ও জড়িয়ে ধরে রমাকে। তারপর মহিতুলকে। বলে, ভাইয়া আমাকে মারবে না তো! তারপর ঘাতকরা তার হাত ধরে অস্ত্র তাক করে। রাসেল কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘আমি মায়ের কাছে যাব। আমি মায়ের কাছে যাব।’ এক সেনা সদস্য ওকে ধরে নিয়ে যায় ডানপাশের পুলিশ বাঙ্কারের কাছে। যাওয়ার সময় বলে, চল তোকে মায়ের কাছে দিয়ে আসি। রাসেল কাঁদছিল। কিছু সময় পর ওই বাঙ্কার থেকেও ভেসে এলো গুলির শব্দ। থেমে গেল রাসেলের পৃথিবী। তারপর চুপ হয়ে গেল রাসেলের কষ্টগুলো। রাসেলকে হারিয়ে ওর অঙ্ক খাতার অঙ্কগুলো কি কষ্ট পেয়েছিল? রাসেল তো জানত অঙ্কের দেশে অঙ্করা কথা বলে। রাসেল কোনো একটা অঙ্ক না করলে ওরা কষ্ট পায়। রাসেল তো অঙ্কগুলোকেও কষ্ট দিতে চাইত না। ওর পৃথিবী যখন থেমে গেল, অঙ্করা তখন কোথায় ছিল?
খান মুহাম্মদ রুমেল লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর। গল্প, কবিতা ও কলাম লেখেন। এখন পর্যন্ত গল্প-কবিতা মিলিয়ে বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ হয়েছে তার। এছাড়া সমসাময়িক বিষয় নিয়ে নিয়মিত কলাম লেখেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। তার লেখা কলাম ‘রিপোর্টারের নোটখাতা’ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতি হিসেবে ‘জুম বাংলা তরুণ কবি সম্মাননা’, ‘ক্র্যাব লেখক সম্মাননা’সহ আরও কিছু পুরস্কার পেয়েছেন। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।