'উত্তর রণাঙ্গন মুক্তিযোদ্ধাদের অব্যক্ত কথা' গ্রন্থটি উক্করাঞ্চলের কুড়িগ্রাম জেলার মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন কৌশল নিয়ে লেখা একটি দালিলিক গ্রন্থ। এই গ্রন্থে মূলত কুড়িগ্রাম জেলার। যে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা বইটি লেখার মুহূর্ত পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন বা আছেন, তাঁদের অনেকের সাক্ষাৎকার থেকে পাওয়া তথ্য, স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর লেখা বিভিন্ন লেখকদের বই থেকে গৃহীত তথ্য সূত্র ধরে উত্তরাঞ্চলের বর্তমান কুড়িগ্রাম জেলার (সাবেক কুড়িগ্রাম মহকুমা) বিভিন্ন যুদ্ধের বর্ণনা, ট্রেনিং, যুদ্ধের অভিজ্ঞতা এবং যুদ্ধের রণাঙ্গন কৌশলের স্মৃতিচারণকে সমন্বিত করে লেখার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় এটা স্পষ্ট হয় যে, ১৯৭১ সালে যখন বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়, সে সময় উত্তরাঞ্চলের এই কুড়িগ্রাম মহকুমার অসংখ্য সময়ের সাহসী সৈনিক সূর্যসন্তানগণ যুদ্ধ শুরুর মুহূর্তে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশের) যে যেখানে অবস্থান করছিলেন, সেখান থেকেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অনেকে যুদ্ধে যাবার পূর্বে নিজের মা-বাবা, ভাই-বোনদের সাথেও শেষ দেখাটাও করে যাবার সুযোগ পাননি। অনেকে আবার নিজের পরিবারের সদস্যদেরকে ভারতে কিংবা দেশের বিভিন্ন স্থানে অর্থাৎ সেই সময়টাতে, যেখানে নিরাপদ মনে করেছেন, সেখানে রেখেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সংগতকারণে এই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কেউ ১১নং সেক্টরে, কেউ ৬নং সেক্টরে আবার কেউ অন্য কোনো সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে লাল সবুজ পতাকা হাতে নিয়ে ঘরে ফিরেছেন। অনেকে আবার যুদ্ধের ময়দানে সম্মুখ যুদ্ধে শাহাদত বরণ করায় মহান শহিদের সেই লাশটাও আর তাঁর নিজ বাড়িতে ফিরে আসেনি। স্বাধীনতা যুদ্ধে মোট কয়টি সেক্টর ছিল? কোন সেক্টরের যুদ্ধ এলাকা কতদূর বিস্তৃত ছিল এবং কোন সেক্টরের দায়িত্বে কে কে ছিলেন-তা নিয়ে প্রথমেই আলোচনার তাগিদ অনুভব করছি। এতে আগামী প্রজন্ম জানতে পারবে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা দেশের জন্য এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য কত বড় ত্যাগ স্বীকার করে এই দেশটাকে মুক্ত করে গেছেন। পাশাপাশি উক্করাঞ্চলের কুড়িগ্রাম জেলার আগামী প্রজন্ম এটাও জানতে পারবে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে কুড়িগ্রামের সন্তান অর্থাৎ তাদের পূর্বপুরুষ ও মহিলারা কীভাবে নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে স্বাধীনতার লাল সূর্যটাকে ছিনিয়ে এনেছিলেন। আমার এই বইটি যেহেতু মুক্তিযুদ্ধে কুড়িগ্রামের বীর মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধের কাহিনি বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে লেখা একটি দালিলিক গ্রন্থ, সে কারণে বইটিতে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আলোচনা নাতিদীর্ঘ হবে এবং রণাঙ্গনের কাহিনি বিস্তার লাভ করবে পুরো বইটিতে। আলোচনার শুরুটা করতে হচ্ছে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত একটু ঐতিহাসিক পটভূমি টেনে।