পিতৃত্ব শব্দটা আমি বাবার কাছ থেকে শিখেছি। যিনি তাঁর সবটা নিজের সন্তানের জন্য বিসর্জন দিয়েছেন, উৎসর্গ করেছেন। অভাবে, সংকটে যিনি বারবার পড়ে গিয়ে আবার সোজা হয়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন, সাহস সঞ্চয় করেছেন। তিনি আমার সাহসের শিক্ষক, আমার শক্তির অন্যতম নেপথ্য মানুষ। বাবাকে আমরা ছোটবেলায় খুব ভয় পেতাম। মায়ের আঁচলে লুকোতাম, ফুফুর পেছনে লুকোতাম, দাদীর কাঁথার নিচে লুকোতাম। এই ভয়ের মানুষটিও কখনও কখনও অসাধারণ বন্ধু হয়ে উঠতেন। ভালোবাসতেন, গল্প শোনাতেন। গল্পগুলো কঠিন ছিলো। তবে শিক্ষনীয়। ঠিক বুঝতাম না, কিন্তু এখন বুঝি। বাবার ঋণ এখন কন্যার কাছে শোধ করি। রাতে গলা জড়িয়ে না ধরলে মেয়েটা ঘুমোতে পারে না। প্রতিদিন নতুন নতুন গল্প চাই। কোথায় পাবো এত নতুন নতুন গল্প? সংকট ওখানেই শেষ নয়। কন্যা গল্পের বিষয়ও বেঁধে দেয়। বেঁধে দেয়া বিষয়েরই গল্প বাঁধতাম। প্রতি রাতে। গল্প শেষ না হতেই ঘুমিয়ে পড়তো মেয়েটা। বাকিঅংশটা নিজে নিজে গাঁথতাম। একসময় লিখে রাখতে শুরু করলাম। সাহস করে প্রথম আলো’র গোল্লাছুটে পাঠালাম। ছাপাও হলো কয়েকটা। শিশুরা পছন্দও করলো। আমার শিশুতোষ গল্প ‘সিংহ কেন বনের রাজা’ ও ‘পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণি’ প্রকাশিত হওয়ার পর শিশুরা আমাকে বুদ্ধিমান প্রাণি বলে ক্ষ্যাপাতে থাকে। আমার ভালো লাগে। লেখাটা এগিয়ে নিলাম। সেই এগিয়ে নেয়ার ফসল আজকের এই গল্পগ্রন্থ। আমি খুব করে বিশ্বস করি, আমাদের আগামী প্রজন্ম হবে বিজ্ঞানমনস্ক। আমি খুব করে বিশ্বস করি, আমাদের আগামী প্রজন্মের অসাধারণ একটি কল্পনার জগৎ থাকবে, গল্পের জগৎ থাকবে। আমি বিশ্বস করি, আমার শিশুতোষগ্রন্থগুলো শিশুদের কল্পনার জগৎকে সমৃদ্ধ করবে। প্রকৃতি ও মানুষের সাথে সম্পর্ক বিনির্মাণে সাহায্য করবে। পৃথিবীর সকল শিশুর প্রতি ভালোবাসা। রঙিন হয়ে উঠুক ওদের সময়, ওদের জীবন। আমার সৃষ্টি যেসব মানুষকে শিহরিত করে তাদের প্রত্যেকরে প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আদর।
উমর ফারুক: জন্ম: কবি উমর ফারুক এর জন্ম ১৭ ডিসেম্বর ১৯৮১। জন্মস্থান সাতক্ষীরা। আশাশুনি উপজেলার নাকতাড়া গ্রাম। মাতা মিসেস জরিনা খাতুন, পিতা মো. মনুয়ার আলী সানা। অগ্রজ মো. আবু বকর সিদ্দীক তাঁর ছায়াবৃক্ষ। তাঁর হাত ধরেই উমর ফারুক—এর বেড়ে ওঠা। পড়ালেখা: কবি উমর ফারুক বেঙ্গলী মিডিয়াম হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা সিটি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জন করেন বিবিএ ও এমবিএ ডিগ্রি। উচ্চশিক্ষায় কৃতিত্বের জন্য অর্জন করেন স্বর্ণপদক। পেশাগত জীবন: ২০১০ সালে যোগদান করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষক হিসেবে। শিক্ষকতা তিনি উপভোগ করেন। প্রচণ্ড উপভোগ করেন। শ্রেণিকক্ষ তাঁর কাছে স্বর্গতুল্য। লেখালেখিও চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে লেখেন। লেখেন অনলাইন পোর্টাল ও সাহিত্যপত্রে। নানান সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও অসংগতির বিরুদ্ধে তার কলম সবসময় প্রবহমান। বর্তমানে শিক্ষকতার পাশাপাশি সংস্কৃতিকর্মী হিসেবেও কাজ করছেন। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গুনগুন—এর সভাপতি। তাঁর দাম্পত্য জীবনের সহযাত্রী তানিয়া সুলতানা সুমি। তাঁদের একমাত্র সন্তান প্রযুক্তা অক্ষর। সাহিত্য চর্চা: সাহিত্য—সংস্কৃতি, জীবনদর্শন ও সমাজ উপলব্ধির অনেক অঙ্গণে তিনি তাঁর হাত ধরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ছাত্রজীবন থেকে লেখালেখির শুরু। প্রকাশিত নিবন্ধ গ্রন্থসমূহ: সঞ্চারি, অন্ধগলির ব্যবচ্ছেদ, ব্যাজস্তুতি প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থসমূহ: সিংহ কেন বনের রাজা ও পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণি।