দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মদান, সাহসিকতা ও বীরত্বের কল্যাণে আমরা স্বাধীন দেশে বসবাস করছি। একাত্তরের সেই দুঃসাহসী বীর যোদ্ধাদের কাছে জাতির ঋণ অশেষ, তারপরও দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, তাঁদের সম্পর্কে জাতি জেনেছে একান্তই স্বল্প। ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সরকার মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য দুঃসাহসী ৬৭৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বিভিন্ন খেতাবে ভূষিত করে তাঁদের নামের তালিকা গেজেটভুক্ত করেন। এই তালিকা সম্প্রসারণের কোনো সুযোগ ছিল না, পরবর্তী সময়ে গ্রহণ-বর্জন-সংযোজনের অবকাশও থাকেনি। সেই সাথে স্মরণ করতে হয় তালিকার বাইরেও রয়েছেন আরো অনেক দুঃসাহসী যোদ্ধা, যাঁরা খেতাব পাওয়ার যোগ্য ছিলেন, কিন্তু বিভিন্ন কারণে তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি, যদিও তাঁদের অবদান কোনো অংশে কম ছিল না। কোনো কিছুর প্রত্যাশা না করে দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপ দেয়া খেতাবপ্রাপ্ত যোদ্ধাদের বীরত্ব কাহিনি জাতির, বিশেষভাবে তরুণ প্রজন্মের, জানা গুরুত্ব বহন করে। দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের নামের সঙ্গে তাঁদের প্রাপ্ত খেতাব যুক্ত হয়েছে ঠিকই, তবে মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের অবদান ও ভূমিকা অনেকাংশে থেকে গেছে আড়ালে। সূর্য সন্তানদের বীরত্বের অংশীদার বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। তাদের জন্য রেখে যেতে হবে বীর সন্তানদের বীরত্বগাথা। তাই বর্তমান গ্রন্থে স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০৫ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার অনন্য অবদানের বিবরণ তুলে ধরেছেন অদম্য মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান কবির বীরপ্রতীক। এ গ্রন্থ আমাদের যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে যাবে, ইতিহাসের চমকপ্রদ ও রোমাঞ্চকর উপাদানের সন্ধান দেবে, আর পাঠকের মধ্যে সঞ্চার করবে মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনগুলোর উদ্দীপনা, যা জাতিকে যোগাবে ভবষ্যিতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার শক্তি ও সাহস।