ভিন্ন চোখে' আমার একটি ভিন্ন রকম বই। এ বইয়ে আমি বাংলাদেশ এবং বাঙালির জাতীয় জজীবন ও মননে ঐতিহাসিক প্রভাববিস্তারকারী ছয়জন মনীষীকে নিয়ে এসেছি। তাদের জীবনী রচনা বা কর্মের বিবরণ নয়, বরং তাদের চিন্তা, দর্শন ও মানসচরিত্রের গূঢ় রহস্য বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছি আমার নিজস্ব বোধ-বিবেচনা থেকে। বিশেষ করে যাদের ব্যাপারে বিপুলসংখ্যক বাঙালির ধারণা এখনো স্বচ্ছ নয়, যাদের বাণী ও কর্মের বাহ্যিক রূপ এবং অন্তর্নিহিত স্বরূপ সম্পর্কে এখনো অনেকের জ্ঞান ও ধারণা যথেষ্ট বিভ্রান্ত ও রহস্যাবৃত, তাদেরকেই শুধু বেছে নেয়া হয়েছে। যেমন ফকির লালন শাহ, শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং সর্বশেষ কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে এই তালিকায় স্থান দেয়া হয়েছে। এছাড়া পূর্বাপর আরও যারা খ্যাতিমান রয়েছেন, তাদের বিষয়ে বাঙালির ধারণা ও মূল্যায়ন যথেষ্টই পরিচ্ছন্ন। কিন্তু এ ছয়জন ব্যক্তিত্বের ধর্মবোধ, চিন্তা-দর্শন, বোধ-বিশ্বাস ও আদর্শিক অবস্থান, বাহ্যিক প্রকাশ ও অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের বিষয়ে অনেকেরই অনেক জিজ্ঞাসা রয়েছে, রয়েছে আগ্রহ। এদের ব্যাপারে পক্ষপাতধর্মী ও গতানুগতিক অনেক পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ প্রচলিত থাকলেও আমি কিছু নির্মোহ ও নিরপেক্ষ পর্যালোচনা উপহার দেয়ার চেষ্টা করেছি। কারণ, আমি মনে করি, কোনো গত্বাঁধা তথ্যে আবেগতাড়িত হয়ে কিংবা কোনো বিশেষ অনুরাগ বা বিরাগের আশ্রয় নিয়ে এই সব মহিরুহ ব্যক্তিত্বদের প্রতি একতরফা অবিচার ও অবমূল্যায়ন চলতে থাকা উচিত নয়, নয় কল্যাণকর। শোভনীয় নয় এদের মতো কালজয়ীদের নিয়ে ক্ষুদ্র স্বার্থের টানাটানি ও ভাগাভাগি। আমি আমার একান্ত বোধ, উদার মানসিকতা ও ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিটি বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা সবিস্তারেই করেছি। সব বিষয় আরও খোলাসা করতে গেলে কথায় কথা বাড়ত, বই বড় হত, তার প্রয়োজন নেই। দীর্ঘ দিনের প্রচলিত চিন্তার বাইরে আমি শুধু ভিন্ন চিন্তার পথটি দেখিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি। বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। এরপরও আমি তো আমার মতোই। আমার সঙ্গে সহমত বা ভিন্নমত পোষণ করার অধিকার পাঠকের নিশ্চয়ই রয়েছে। বইটি পড়ে ভালোই লাগবে।
বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় কবি, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিক, কলামিস্ট, সুবক্তা, টিভি আলােচক ও উপস্থাপক। একজন উদারপন্থী চিন্তাবিদ, দার্শনিক এবং প্রগতিশীল রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবেও তিনি সর্বমহলে সমাদৃত। তার কবিতা ও সংগীত দেশপ্রেম, মানবতাবাদ, বিশ্ব-শান্তি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, জাতীয় সংহতি এবং ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক চেতনায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। জীবন, প্রকৃতি, প্রেম-বিরহ ও তাত্ত্বিক রহস্যের ব্যতিক্রমী উপাদানও ফুটে ওঠে তার রচনায়। বাংলাদেশের বিপুল জননন্দিত জাতীয় কণ্ঠশিল্পীদের অনেকেই গণমাধ্যমে তার লেখা গান পরিবেশন করেছেন। গণমাধ্যমে এবং দেশ বিদেশের শত শত মঞ্চে ময়দানে মিলনায়তনে অনবদ্য বক্তৃতা, কবিতা ও সংগীতে কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন তিনি নিজেও। তার কথা-সুরে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর জন্য উদ্দীপনা সংগীত এবং আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর জন্য দলীয় সংগীতও রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ধর্মীয় টিভি চ্যানেল ইসলামিক টিভির প্রথম অনুষ্ঠান নির্বাহী ছিলেন। দেশের সর্বাধিক প্রচারিত ও পাঠক-নন্দিত জাতীয় সাপ্তাহিক লিখনীর সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ইসলামিক কালচারাল ইনস্টিটিউট (আইসিআই) এবং ‘হলি মিডিয়া' নামে দুটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। এছাড়াও ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর নিয়মিত শিল্পী, আলােচক এবং বিভিন্ন জাতীয় প্রতিযােগিতা ও রিয়েলিটি শাে’র সম্মানিত বিচারকের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তার প্রকাশিত এবং প্রকাশিতব্য গ্রন্থের মধ্যে- লাল সাগরের ঢেউ, প্রাণের আওয়াজ, অচিনকাব্য, নতুন ঝড়, আমার গান, মুরাকাবা (আত্মদর্শনের তত্তরহস্য), সুন্দর গল্প, প্রেম বিরহের মাঝে, শিশুপাঠ, পৃথিবীর পথে, রাষ্ট্রচিন্তা, প্রচ্ছদ প্রসঙ্গ, সরল সংলাপ, মেঘে ঢাকা সুন্নাত ও আল কুরআনের কাব্যানুবাদ অন্যতম। প্রকাশিত সংগীত এলবামের মধ্যে সীমান্ত খুলে দাও, দিনবদলের দিন এসেছে, ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি, ইয়ে মেরা ওয়াতান, আবার যুদ্ধ হবে, নতুন ইশতেহার আসছে ও দাস্তান-ই মুহাম্মাদ উল্লেখযােগ্য। তিনি যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সৌদীআরব, বাহরাইনসহ বেশকিছু দেশ ভ্রমণ করেছেন। দেশে ও বহিবিশ্বে তিনি “একবিংশের কবি’ ও ‘জাগ্রত কবি’ উপাধিতে বিপুল সমাদৃত এবং মুসলিম উম্মাহর জাতীয় কবি' উপাধিতেও ভূষিত। এ যাবত তার অর্জিত পুরস্কার ও সম্মাননার পরিমাণ কম নয়। শিক্ষাজীবনে তিনি ইসলামিক স্টাডিজ এন্ড এ্যারাবিক (তাকমীল) এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর (এমএসএস) ডিগ্রী অর্জন করেন। বর্তমানে ইতিহাস দর্শন সংস্কৃতি ও ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে উচ্চতর গবেষণায় রত আছেন।