"স্বাধীনতা সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ বিশ শতকের তৃতীয় দশকে, পূর্ববাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢাকা নগরীতে একটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ইতিহাস পর্যালােচনা করলে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হল, এক ঐতিহাসিক ঘটনার আবর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃষ্টি। বাংলার মুক্তিসংগ্রাম বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সময়। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ এই সময়ের পর্বে এই বাংলার সবরকমের রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে সূতিকাগার ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, সাম্প্রদায়িক সংঘাতময় ঢাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়, পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সূচনা, আটচল্লিশের ভাষা আন্দোলন পরবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন, বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব, পাকিস্তানী সামরিক স্বৈরাচার আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সত্তরের সাধারণ নির্বাচন, মহাপ্রলয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অসহযােগ আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবী নিধনসহ ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ও চরিত্র উঠে এসেছে এই গ্রন্থে- যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নির্মাণের জন্য একটি নির্ভরযােগ্য আকর গ্রন্থ হিশেবে অনন্য।
রফিকুল ইসলাম (১৯৪৩-) চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রফিকুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেখাপড়া করেন। ভাষাতত্ত্বে উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদনা করেন আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়, মিশিগান-অ্যান আরবর বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টরে। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বন্দীশিবিরে নির্যাতিত হন। ১৯৫৮ সাল থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও নজরুল গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। ‘নজরুল নির্দেশিকা’, ‘ভাষাতত্ত্ব’, ‘নজরুল জীবনী’, ‘শহীদ মিনার’, ‘বাংলা ভাষা আন্দোলন’, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর’, ‘অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু কলোকোয়্যেল বেঙ্গালি’ প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য বই। স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ তিনি আরো অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।