উত্তরের ছোট্ট মহকুমা শহর নীলফামারী। তখন বিদ্যুত ছিল না, পাকা রাস্তা ছিল না। যানবাহন বলতে রিক্সা আর গরুর গাড়ি। দূরে যেতে হলে রেলগাড়ি একমাত্র ভরসা। মানুষও হতদরিদ্র। কিন্তু পেছনে পড়ে থাকা শহরটার মানুষগুলো ছিল প্রাণশক্তিতে ভরপুর। সংস্কৃতি চর্চা আর খেলাধূলায় শহরটি দরিদ্র ছিল না, বরং ছিল ঐশ্বর্যমণ্ডিত। এই ছোট শহরের সংস্কৃতি চর্চায় আমার শিক্ষক পিতা মাতার ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। ফলে নাচ, গান, অভিনয়, আবৃত্তি- এসবের মধ্যে বড় হয়ে ওঠা। কী কারণে জানিনা আবৃত্তি আমাকে দখল করে ফেললো। তখন কবিতা যে তেমন করে বুঝি তা নয়। হয়তো কবিতার ছন্দোময়তা বা কিছু একটা আমার মনের গভীরে কোথাও একটা অনুরণন তুলেছিল বলেই কবিতা পড়ার সঙ্গে এত বছরের গেরস্থালি। হয়তো এটাই কবিতার শক্তি। স্কুল, কলেজে আবৃত্তি করেছি সুযোগমত, কিন্তু বেশিটাই ছিল নিজের জন্য। মনের আনন্দে কবিতা পড়া। আমার বাবাই ছিলেন আমার গুরু, আমার মা ছিলেন শ্রোতা। ঢাকার মঞ্চে আবৃত্তি করেছি অনেক পরে। করোনা আমাদের জীবন থেকে যেমন দু'টি বছর কেড়ে নিল, তেমনি অনেক গুণী মানুষ, শ্রদ্ধেয় জন হারিয়ে গেলেন চিরতরে। বাংলাদেশেই হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারালেন করোনায়।
আসাদুজ্জামান নূর জন্ম ১৯৪৬ সালের ৩১ অক্টোবর নীলফামারী জেলায়। পিতা আবু নাজেম মােহাম্মদ আলী এবং মাতা আমিনা বেগম। তিনি ১৯৬২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৬৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৬৬ সালে নীলফামারী মহাবিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ছাত্র জীবন থেকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে ওতপ্রােতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। এ দেশের নাট্য আন্দোলনে অন্যতম পথিকৃত তিনি। ১৯৭২ সালে নাগরিক নাট্যদলে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে থিয়েটার জগতে তার পদার্পণ। এ পর্যন্ত ১৫টি মঞ্চ নাটকে তিনি ৬০০ এর বেশি বার অভিনয় করেছেন। তিনি নাটকের নির্দেশনাও দিয়েছেন। মঞ্চ ও টেলিভিশনে তার লেখা বেশকিছু নাটক সমাদৃত হয়েছে। কর্মজীবন শুরু ১৯৭২ সালে বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক চিত্রালীর মাধ্যমে। ১৯৭৩ সালে যােগ দেন একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। ছাত্র জীবন থেকে সম্পৃক্ত হন রাজনীতির সাথে। ১৯৬৩ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন-এ যােগ দেন। ১৯৬৫ সালে নীলফামারী কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে তিনি সক্রিয়ভাবে যােগ দেন মুক্তিযুদ্ধে এবং বিভিন্ন সময় এরশাদ বিরােধী আন্দোলন, শহীদ জননী। জাহানারা ইমাম এর নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে আন্দোলনসহ নানা আন্দোলন ও সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনােনীত প্রার্থী হিসেবে নীলফামারী-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব। পালন করছেন। এছাড়া বর্তমানে তিনি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর-এর ট্রাস্টি বাের্ডের সদস্য, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ এর সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট-এর সদস্য এবং বাংলাদেশ-রাশিয়া। ফ্রেন্ডশিপ সােসাইটির সাধারণ সম্পাদক। সহধর্মিনী ডা. শাহীন আক্তার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান এর জনক।