উপন্যাস মানে শ্রীকান্ত বা দেবদাস অথবা চোরাবালি। উপন্যাস মানে প্রেম, বিরহ, সংসার, জ্বালা বা জীবন কথা। হেরেম একটি ব্যতিক্রমী উপন্যাস, যাতে আছে স্বাধিকার, জেনোসাইড আর রাজনীতির খুনশুটি। যে উপন্যাসের মূল চরিত্র আগা মোহম্মদ ইয়াহিয়া বান। যে উপন্যাসের পটভূমি ভারতবর্ষ থেকে বাংলা, সাতচল্লিশ থেকে একাত্তর। রাজনীতির মহা সংকট আশ্রিত উপন্যাস যা পাঠককে নিয়ে যাবে বিংশ শতাব্দীর ঘটনাবহুল পল্লীতে, হারাবেন এই উপন্যাসের পাতায় পাতায়। কি নেই? ... আছে নিশিজাগা প্রেমকথা, আছে সুর লহরীতে পানপাত্রে হারিয়ে যাওয়া মাদকতা। মাউন্টব্যাটেন পত্নী এডুইনা প্রেমাসক্ত নেহেরু ও জিন্নাহ এই উপন্যাসের আরেক চরিত্র, যাদের হাতে ছিন্ন ভিন্ন মহাভারত, কোটি কোটি জীবনের জীবন মহাভারত, কোটি মানুষের রক্তরাংগা মহাভারত। লালসাসিক্ত ক’জন নেতা, ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হলো আবহমানকাল থেকে একসাথে মিশে থাকা কোটি কোটি মানুষ। গৃহহারা মানুষের আর্তনাদ, লুটেরা দাংগাবাজদের আস্পালন এখনও শোনা যায় মহাভারতের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ছাড়িয়ে এই ধরণীর কোনে কোনে। ইয়াহিয়া আকলিমের সুরা ও সাকীতে কোকিলকণ্ঠী নূরজাহানের অভিসারে তলিয়ে যায় মানবতা। হত্যাযজ্ঞের মহোৎসব অভিসারে তলিয়ে যায় মানবতা। হত্যাযজ্ঞের মহোৎসব থেকে জন্ম নেয় বাংলাদেশ। মহাভারতের ছিন্ন পাতা থেকে কুঁড়িয়ে নেয়া পাতায় সৃষ্টি হয়েছে এই হেরেম যা আপনাকে শুধু কাছে নেবে, দূরে যেতে দেবে না। দগ্ধ পটভূমির আলোকে লেখা উপন্যাস যেখানে ইয়াহিয়া চলে গেলেন নর্দমায় আর শেখ মুজিব হয়ে এলেন অনন্য মহানায়ক।
জীবনধর্মী লেখক শৈশবেই ছবি আঁকতেন। সঙ্গীত ও সুন্দরের উদ্ভাবনায় প্রবল আকর্ষণ ছিল। ১৯৬৬ সালে বসুরহাট হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় দেয়াল পত্রিকায় কবিতা লিখে ছাত্র শিক্ষকদের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ১৯৬৮ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে পড়ার সময় কবিতা আবৃত্তি করে তৎকালীন ছাত্র শিক্ষক সমাজে সুপরিচিতি পান। উপনসত্তরের গণআন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের সুবাদে ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং সান্নিধ্য লাভ করেন। সঙ্গীত প্রেমী হবার কারণে ছাত্র ইউনিয়ন ও উদিসির সাথে যুক্ত হন। ১৯৭১ "মুক্তিযুদ্ধ" পত্রিকার নোয়াখালী দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলের রিপোর্টার ও বণ্টনের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন ও ত্রিপুরা যান। দেশ স্বাধীন হবার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার পর পরবর্তীতে আশির দশকে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া থেকে ব্যবস্থাপনার উচ্চতর ডিগ্রি নেন। তিনি কিছুকাল রেডিও বাংলাদেশ ঢাকা কেন্দ্রের চুক্তি ভিত্তিক পাণ্ডুলিপিকার ছিলেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তিনি গ্রেফতার হন ও জেল জুলুমের শিকার হন। ২০০১ সালে ক্ষমতার পালা বদলে নির্যাতনের শিকার হন। তার বসুরহাটের বাসভবনে অগ্নি সংযোগ করা হয়, মিথ্যা হত্যা মামলায় জড়ানো হয়। নির্যাতন নিপীড়নে তার পুরো পরিবার চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। স্ত্রী কন্যা প্রয়াত হন। পাগলপ্রায় হয়ে পৃথিবীর দেশে দেশে ঘুরে বেড়ান। প্রায় দশ বছর হারিয়ে থাকেন উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকাসহ নানা দেশে। দশ বছর পর লিখলেন 'মানুষের ধর্ম মনুষ্যত্ব'; উপন্যাস 'শামা'; ভ্রমণকাহিনী 'দেশ দেশান্তরে' ও অনেকগুলো কবিতা। মানবতাবাদী এই লেখক মানবসেবার উদ্দেশ্যে এখন ডায়াবেটিক সমিতির সাথে যুক্ত হয়ে চিকিৎসাকাতর মানুষের সেবায় রত।