সাল মাস মনে নেই; মনে আছে আমার অফিস ঘরের সামনে এক ভদ্রমহিলা ঘরে ঢুকবেন কি না দ্বিধা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। বুঝতে পারি অনুমতি পেলে তিনি প্রবেশ করবেন। আমার অফিস বাংলা একাডেমী; আমি তখন ত্রৈমাসিক 'উত্তরাধিকার' পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক। ভদ্রমহিলা ঝর্না রহমান। তাঁকে সেদিনই প্রথম দেখি; তবে কাগজে তাঁর লেখা দেখেছি; পড়েওছি কিছু গল্প। বাংলা একাডেমীর উত্তরাধিকার পত্রিকার জন্যে তিনি যে গল্পটি দিয়ে গেলেন সেটি কয়েকদিন পরে পড়ে চমকে উঠেছি; তাঁর গল্প তো দেখছি অন্য মাত্রা বহন করে! সেই গল্পে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে হাসপাতালে অসুস্থ স্বামীর বাঁচা-মরা নিয়ে উদ্বেগের গল্প, কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর যখন দেখা গেল নানান ও ছোটখাটো শোকের পরে স্ত্রীর আড়ালে লেখক ঝর্না রহমান হাসপাতাল ছেড়ে যাবার আগে কোনো কিছু ফেলে গেলেন কি না চিন্তা করে বালিশের তলা, তোশকের নিচে পর্যন্ত উল্টে পাল্টে দেখেন, তখন বুঝতে অসুবিধা হয়না এ লেখকের চোখ জীবনের বিপরীত ভূমিতে ও নিবদ্ধ। এ ঘটনাটি প্রায় দেড়যুগ আগের। বলতে চাই, ঝর্না রহমান সমস্ত গল্প জীবনের চেনা ভূমিতে স্থাপন করে এগোতে এগোতে এমন একটা অনুষঙ্গে নিয়ে যান, যেটার কথা পাঠকের প্রথম পর্যায়ে মনেই আসে না; আর যখন এসে যায় তখন তাকে বেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়েই ভাবতে হয়: সত্যি তো, জীবনের এই অবধারিত অংশটুকু কেন ভাবনায় আসেনি!
চল্লিশ বছর ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছেন। ১৯৮০ সনে বাংলাদেশ পরিষদ আয়োজিত একুশে সাহিত্য প্রতিযোগিতায় ছোটগল্পে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে সাহিত্যক্ষেত্রে তাঁর আত্মপ্রকাশ। গল্প উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, নাটক, কবিতা, ভ্রমণ-শিশুসাহিত্য, সবক্ষেত্রেই তাঁর বিচরণ। গল্পকার হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৬০টি। পেশাগত জীবনে তিনি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ রাইফেলস পাবলিক কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। বেতার ও টেলিভিশনের নিয়মিত কণ্ঠশিল্পী। বাংলা ভাষার কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০২১ সালে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার-১৪২৭ লাভ করেন। জন্ম ২৮ জুন, ১৯৫৯, গ্রামে বাড়ি : কেওয়ার, মুন্সিগঞ্জ।