মাওলানা কালীম সিদ্দিকী হাফিজাহুল্লাহ। জীবদ্দশাতেই যিনি হয়ে উঠেছেন সমকালের কিংবদন্তী। হাজার হাজার মানুষ যে মহান ব্যক্তির হাতে হাত রেখে ইসলামের সুনিবিঢ় ছায়ায় আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে। খুঁজে পেয়েছে জীবনের অর্থ ও সাফল্যের মহাসড়কের সন্ধান। তিনি একজন নিভৃতচারী নিরলস কর্মবীর। দীনের একজন দরদী দায়ী। অসংখ্য দায়ীদের আদর্শ ও প্রেরণার বাতিঘর। অমুসলিমদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোর কাজে অনন্য এক ব্যক্তিত্ব। ব্যক্তি জীবনে তিনি মুফাক্কিরে ইসলাম সায়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. দ্বারা প্রভাবিত। একাধারে তিনি আলী মিয়া নদভী ও শায়খ যাকারিয়া রহ. —এর খলীফা। কঠোর অধ্যবসায় আর জানতোর মেহনতের বদৌলতে তিনি হয়ে উঠেছেন তুখোড় বাগ্মী, দক্ষ সম্পাদক ও লেখক এবং অভিজ্ঞ একজন শিক্ষক। জীবনের দীর্ঘ একটা সময় লক্ষ্মৌর নদওয়াতুল উলামাতে কাটিয়েছেন মাওলানা কালীম সিদ্দিকী। জামইয়্যাহ্ ইমাম ওয়ালীউল্লাহ ট্রাস্ট নামে তিনি একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন। এটি মূলত একটি দাওয়াতী সংগঠন। তবে এর আওতায় দাওয়াতের পাশাপাশি নিয়মিত বিভিন্ন দাতব্য কাজও আঞ্জাম দেয়া হয়ে থাকে। এর আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হল— এর তত্ত্বাবধানে গোটা ভারতজুড়ে অসংখ্য মাদরাসা ও স্কুল পরিচালনা করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার জন্য প্রাদেশিক শহরগুলোতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় অফিসও রয়েছে। উদুর্ ভাষায় ‘আরমুগানে ওয়ালীউল্লাহ’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন মাওলানা কালীম সিদ্দিকী। এছাড়া ‘সর্বশান্তি’ নামে হিন্দিতে এবং ‘আল খাইর’ নামে আরবীতে দু’টি পত্রিকাও তিনি সম্পাদনা করেন। ওয়ার্ল্ড পিস অর্গানাইজেশন নামে আরেকটি সংগঠনও প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ সংগঠনের মাধ্যমে শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য তিনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এই মহান মনীষী ভারতের উত্তর প্রদেশে মুজাফফর নগর জেলাধীন নিজ গ্রাম ফুলাতে উচ্চতর একটি মাদরাসা পরিচালনা করেন। এখানে তিনি দায়ীদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য বিভিন্ন মেয়াদী কোর্সেরও আয়োজন করে থাকেন। ইসলামের সুমহান শিক্ষা ও আদর্শকে কথা ও কাজের ভেতর দিয়ে ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে তিনি ভারতীয় অমুসলমিদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। হাজার হাজার অমুসলিম সরাসরি তার হাতে কিংবা তার তৈরি করা লোকদের হাতে ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হচ্ছে। তারা খুঁজে পাচ্ছে জীবনের প্রকৃত অর্থ আর গন্তব্যের রাজপথ। অন্ধকারে আচ্ছন্ন এইসব মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ইসলাম গ্রহণের বাঁধভাঙ্গা ে¯্রাত হতবাক করে দিচ্ছে ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকার ও সমমনা বিভিন্ন সংঘকে। ফলে এই জাগরণের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে মাওলানা কালীম সিদ্দিকী তাদের চক্ষুশূলে পরিণত হন। কেন্দ্রীয় সরকারের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংঘ তার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র আঁটতে থাকে। সেই জঘন্য ষড়যন্ত্রের নির্দয় শিকার হয়ে বেশ ক’মাস যাবৎ কয়েকজন সঙ্গীসহ তিনি এখন কারাবাস করছেন। দেশীয় আইনের ধারা অনুযায়ী একজন কারাবন্দী হিসেবে যে সুযোগ পাওয়ার অধিকার তার রয়েছে, তা থেকেও অন্যায়ভাবে তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে মাঝে মধ্যে পত্র পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে। এই জুলুমের তীব্র নিন্দা জানিয়ে মহান আল্লাহর কাছে আমরা অভিযোগ দায়ের করে রাখছি। তিনিই আমাদের ভরসা ও সাহায্যের একমাত্র ঠিকানা।