বত্রিশ নম্বর-একটি সড়ক মাত্র নয়, নয় খালি একটি প্রতীকী সংখ্যা, শুধু একটি সংখ্যাবাচকেই সীমাবদ্ধ নয় এ-বাড়ি। যিনি মনে করেন, বাঙালি ও বাংলাদেশের ইতিহাস খুঁজতে হলে যেতে হবে বত্রিশ নম্বর। বাংলাদেশ ও বাঙালির গৌরবগাথা দেখতে হলে যেতে হবে বত্রিশ নম্বর। বাঙালি ও বাংলাদেশের স্থাপত্য ইতিহাস জানতে হলে পাতা উল্টে দেখতে হবে বত্রিশ নম্বর। বাংলাদেশ ও বাঙালির কলঙ্কচিহ্ন দেখতেও যেতে হবে নম্বর। বত্রিশ নম্বর-এ বাড়িটির প্রতিটি ইটে গাঁথা রয়েছে বাঙালি জাতির গৌরবগাথা, শৌর্যের কথা। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ও অর্জনের কথা। বিশ্বমানচিত্রে একটি নতুন দেশের রক্তসিন্ধু অভ্যুদয়ের কথা। বত্রিশ নম্বরই স্বাধীনতা পবিত্র সনদ আর অঙ্গীকারনামা। বত্রিশ নম্বরকে নিয়ে একটি অনাবদ্য অনুপম কবিতার পাশাপাশি দেশজ চেতনায় স্ফুরিত স্বাধীনতা। সার্বভৌম ইত্যাদি বিষয়ে একটি বোধের উন্মোচন আশা করেন তিনি, চেতনা বিকাশে সত্তার অবজাগরণও কামনা করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সাফল্য আর ব্যক্তিগত হৃদয়ের মাহাত্ম্য নিয়ে নিটোল আবেগ আর যুক্তিনির্ভরতার মিশেলে একেবারে তরতাজা কবিতাসমূহ ঠাঁই নিয়েছে বত্রিশ নম্বর কাব্যে। গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা বলেছেন তিনি, অধিকারসচেতন মানুষের ঘুমভাঙানি গান শুনিয়েছেন তিনি। বহুদিন বিরতির পর ষাট ছুঁই ছুঁই তরুণ বেলাল চৌধুরী তাঁর সহজাত তারুণ্যদ্যুতি, অর্জিত অভিজ্ঞতার অভিজ্ঞান, কৌতুকি-কাব্যিকতা আর মুক্তছন্দের আধুনিক গাদ্যিকময়তায় অনন্যসাধারণ কিছু কবিতা নিয়ে আবারো কবিতাঙ্গনে ফিরে এসছেন স্বীয় মানসিকতা, রুচি, মনন আর বোধের সমন্বিত সঞ্চয়ন ‘বত্রিশ নম্বর’নিয়ে।
বলা হয়-বাল্যকাল মানে সকাল বেলাই একজন মানুষের জীবনের পথপ্রদর্শক। বাউন্ডুলেপনার শুরু স্কুলে থাকতেই ‘ভােজনং যত্রতত্র, শয়নং হট্টমন্দিরে’- এই ছিল মন্ত্র । তারপর সাংবাদিকতা, জেলখাটা, গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার কাজকত কী! অবশেষে একদিন কলকাতায় নােঙর ফেলা ১৯৬৩এর দিকে। বন্ধু-বান্ধব জুটল অনেক। তার মধ্যে উঠতি কবি-লিখিয়েরাই সংখ্যাধিক্য। এদের মধ্যে ছিলেন শক্তি, সুনীল, শীর্ষেন্দু, উৎপল, সন্দীপন প্রমুখ আজকের নক্ষত্ররা সান্নিধ্য ও সস্নেহ প্রশ্রয় পেয়েছেন কমল কুমার মজুমদার, গৌর কিশাের ঘােষ, নীরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, সন্তোষ কুমার। ঘােষের মতাে সহৃদয় মানুষদের। নিজের অস্তিত্বকে জানান। দেওয়ার জন্যে লেখালেখির শুরু ১৯৬৫ সালে। মূলত গদ্যের লেখক হলেও পর্বতপ্রমাণ আলসেমির জন্যে কুঁড়ের বাদশা বলে পদ্যকেই বেছে নিলেন বাঙালি ঐতিহ্যের ধারায় । এই ছন্নছাড়া সময়ের ভেতরই কিছুদিন সম্পাদনা করেছেন কৃত্তিবাস'-এর মতাে পত্রিকা। ১৯৭৪ সালে দেশে ফেরা। আর দশজন কুলাঙ্গার ছেলের মতােই মায়ের আদেশ শিরােধার্য করে বিয়ে বা গার্হস্থ্য আশ্রমে প্রবেশ । সাপ্তাহিক সচিত্র সন্ধানীর নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যাবতীয় খ্যাতি বা অখ্যাতি। এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা আট-এর মতাে। পুরস্কারের মধ্যে মাটি খুঁড়ে পাওয়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার ১৯৮৪-তে। অনেক বিষয়ের মধ্যে সায়েন্স ফিকশন তার বিশেষ প্রিয় একটি । জন্ম: ১৯৩৮-এ শরিশাদিতে । লেখকের অন্যান্য কটি বই-কবিতা: যাবজ্জীবন পরম উল্লাসে, কবিতার কমলবনে, স্বপ্নবন্দী, অনূদিত উপন্যাস: মৃত্যুর কড়ানাড়া; কিশাের উপন্যাস: ফাতনা; কিশাের গল্প সংকলন: বত্রিশ দাত।