'সন্ধ্যা নেমে গেল ঘন হয়ে। মাগরিবের আজান শেষ হয়েছে অনেকক্ষণ, কিন্তু তার হারানো সুরে এখনও থিরথির করেছে হাওয়া, আর বহু পাখি উত্তর দিকের বালু নদের ওদিক থেকে এসে বসছে বড় বড় সব দেবদারু, শিরীষ ও কাঁঠালের ডালে, ঝগড়া করছে ওরা। ' — এই লাইনগুলো বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে লেখা বিষণ্ণ উপন্যাস 'আগস্ট আবছায়া' থেকে নেওয়া । মাসরুর আরেফিন ইতিহাসের অন্যতম জঘন্য এই ট্র্যাজিক ঘটনার বিবরণকে তাঁর বইতে বারবার মুড়ে দিয়েছেন গাছ-ফুল-লতাপাতা-গুল্ম দিয়ে, যাতে করে পাঠকের জন্য সহনীয় হয় এই রক্ত ও বেঈমানির উপাখ্যানকে পড়া, যাতে করে গাছের ছায়ার আবছায়া কিছুটা হলেও মায়া দিয়ে ঘিরে রাখে এই সহিংস পৃথিবীর ভরকেন্দ্রকে। এ বইয়ের ভূমিকায় মাসরুর লিখেছেন ‘আগস্টের এই জায়গাগুলোই আবছায়া, যেমন এর পুষ্পিতা ও মাধবীলতার ঝাড়।' ইতিহাসভিত্তিক লেখা উপন্যাসটিতে বিভিন্ন উদ্ভিদের প্রসঙ্গ নানাভাবে এসেছে অন্তত ১৭৫ বার। যেমন এতে বাংলার গাছ এসেছে বিভূতিভূষণের পায়ে পায়ে, তেমন ফ্রান্সের হোথর্ন বৃক্ষের ছায়া ধরে এসেছেন মার্সেল প্রস্ত। আর ‘আগস্ট আবছায়ার মায়াবী বৃক্ষেরা' বইতে বিশাল সেই উদ্ভিদবিশ্বের পুরোটাকে ধরেছেন খ্যাতিমান প্রকৃতিবিদ, এবারের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাওয়া নিসর্গলেখক মোকারম হোসেন। এ বইতে উপন্যাসে উল্লিখিত প্রতিটি উদ্ভিদের জাত-বংশ-রঙ-স্বভাব ইত্যাদির সচিত্র বিবরণই যে শুধু আছে, তা নয়। এটা একই সঙ্গে সাহিত্যও, যেহেতু এর যেকোনো উদ্ভিদের বর্ণনার শুরুতেই আপনি পাচ্ছেন উপন্যাসে ওই উদ্ভিদ নিয়ে বলা ব্যাকগ্রাউন্ড ন্যারেশনটুকুও। অর্থাৎ ঔপন্যাসিকের হৃদয়স্পর্শী বয়ানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এতে প্রতিটি গাছের বিন্যাস, অস্তিত্ব ও মাধুর্যের এক অসামান্য চিত্রায়ন করেছেন মোকারম হোসেন, যার ফলে আশ্চর্য এক সাহিত্য-বিজ্ঞান-প্রকৃতিবর্ণনার মিশেলে জীবন্ত হয়ে উঠেছে ‘আগস্ট আবছায়া'-র প্রতিটি পুষ্প-বৃক্ষ-লতা-গুল্ম।
জন্ম মাতুলালয়ে, ৩০ অক্টোবর। বাবা : একেএম ফজলুল করিম, মা : মনোয়ারা বেগম। গ্রাম : লক্ষণপুর, পোস্ট : ভবানীজীবনপুর, উপজেলা : বেগমগঞ্জ, জেলা : নোয়াখালী। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা। একযুগেরও বেশি সময় দৈনিক প্রথম আলোয় ‘প্রকৃতি’ কলামে লিখছেন। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৮। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : বাংলাদেশের নদী, বর্ণমালায় বাংলাদেশ, বিশ্বের সেরা দর্শনীয় স্থান, বাংলাদেশের মেলা, ঘুরে আসি বাংলাদেশ, বাংলাদেশের ফুল ও ফল, জীবনের জন্য বৃক্ষ, বিপন্ন প্রজাতির খেরোখাতা, প্রকৃতি ও প্রাণসম্পদ (সম্পাদনা), বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, ঋতুর রঙে ফুলের শোভা, আমাদের সবুজ বন্ধুরা, ভোরের ফুল সন্ধ্যার পাখিরা, আমাদের পার্ক ও উদ্যান, ছয় রঙের বাংলাদেশ, বাংলার শত ফুল, জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলার পুষ্প-বৃক্ষ ইত্যাদি। পরিবেশসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৩ সালে কাজী কাদের নওয়াজ স্বর্ণপদক, ১৪০৮ ও ১৪১০ সালে অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার এবং ২০১১ সালে এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন। নেশা ছবি তোলা ও ভ্রমণ।