মাহবুব আজীজের ছোটগল্পে সমকাল ও পরিপার্শ্ব সরাসরি উপস্থিত হয়, স্তরে স্তরে ভিড় করে বিচিত্র সব মানুষ যারা নানা টানাপড়েনের মধ্যেও জীবনকে দুহাতে আঁকড়ে ধরে তুমুল বাঁচতে চায়, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে তারা অসম্ভবকল্প সব কাণ্ডে নিজেদের জড়ায়। ভাস্কর্যপ্রতিম সুতীক্ষ্ণ ও গতিময় ভাষায় পরিপার্শ্ব ও চরিত্রের গহিনে প্রবেশ করে তিনি মেলে ধরেন আপাতচেনা চারপাশের ভেতরসত্যের সারাৎসার। বেঁচে থাকবার বিপন্নতা ও বিস্ময়ের আবিষ্কার এবং অনিবার্য প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া এই কথাশিল্পীর প্রবণতা। মাহবুব আজীজের ছোটগল্পে ভিড় করে অনিশ্চয়তা, আসে আকস্মিক দুর্বিপাক, ঘন হয়ে আসে প্রতিকূলতা, আর এ-সবকিছুর মধ্যে অন্তপ্রবাহের মতো ছড়িয়ে থাকে বাংলাদেশের সমকালীন বাঙ্ময় মুখ। তাঁর গল্পের চরিত্রদের মধ্যে বিচ্ছুরিত হয় অবিরল ফল্গুধারার মতো বহমান চিরকালীন আনন্দময় প্রেম, বেঁচে থাকার সপ্রাণ আকুলতা। “জলমহাল' গ্রন্থে রয়েছে একগুচ্ছ ছোটগল্প। এখানে রয়েছেন এমন এক লেখক যিনি ব্যক্তিগত ও নৈর্ব্যক্তিক; একই সঙ্গে অন্তরঙ্গ ও স্মিতহাস্য। ছোটগল্পের বয়নকৌশলে তিনি তির্যক ও ইঙ্গিতময় সরাসরি নয়; মৃদু—তবে সংবেদী ও অতলস্পর্শী। এই লেখক সামান্য আড়াল থেকে নিজস্ব ঘরানার কথাশিল্পের পথ তৈরি করেন । সম্পর্কের আবছায়া —–নির্মম নিয়তির সামনে অসহায় মানুষের অসহায়ত্ব ও হাহাকার আর মানুষেরই বানানো সামন্তীয় সমাজ ও আভিজাত্যবোধের নির্মম মানসিকতার স্পর্শ আছে 'জলমহাল' গ্রন্থের নানা গল্পে। নদীতীরবর্তী প্রান্তিক জনপদের মানুষ জলকাদাসমেত এই গ্রন্থে যেমন উপস্থিত, একইভাবে লেখক কোনো কোনো গল্পে ব্যক্তি থেকে সমগ্রের অংশ হয়ে ওঠেন 'জলমহাল'-এ।