এই কিতাবে সৈয়দ মবনু ঈমান, আমল, আকিদা এবং আকিদার বিভিন্ন স্তর নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ইলমে মারিফতের বিশদ ব্যাখ্যা ও মাকাম নিয়ে কথা বলেছেন। কাশফ ও আত্মিক জগতের বিশাল সফর (ছয়েরে আফাকী, ছয়েরে আনফুসী) নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাসাউফের বিভিন্ন মাকাম (ফানা, বাক্বা) নিয়ে আলোচনা করেছেন। জ্ঞান—বুদ্ধি—কর্ম—প্রেমের সমন্বয়ে নিজেকে জাগাতে ও আল্লাহর সাথে পরিচিত হতে আধ্যাত্মিক সফর কতটা জরুরি, এবং এই সফর কিভাবে মানুষকে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে দেয়, সেটা তিনি দেখিয়েছেন। প্রকৃত অর্থে মানুষের জীবনটাই একটা সফর। আলমে আরওয়াহ থেকে আলমে কবির, আলমে কবির থেকে আলমে বরজখ, আলমে বরজখ থেতে পরকালের জগত। এই সফরকে আরবিতে ছায়ের, রেহলাত, হজ¦, ওমরা ইত্যাদি বলা হয়। ইসলামে সফর বা ভ্রমণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার উৎস হচ্ছে ভ্রমণ। ভ্রমণ সবসময়ই একটি ইবাদত এবং আল্লাহর নির্দেশ। সৈয়দ মবনু এই কিতাবে মোটাদাগে চারটি ভ্রমণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেগুলি হলো— ১. ছায়ের ফিল আরদ (জমিনে ভ্রমণ) ২. ছায়ের ইলাল্লাহ (আল্লাহর দিকে ভ্রমণ) ৩. ছায়ের ফিল্লাহ (আল্লাহর মধ্যে ভ্রমণ) এবং ৪. ছায়ের আমিল্লাহ বা ছায়ের ফি খালকিল্লাহ (আল্লাহ থেকে তাঁর সৃষ্টির দিকে ভ্রমণ)। মুর্শিদের সাহায্যে আল্লাহকে পুর্ণাঙ্গরূপে জানতে এই চারটি ভ্রমণ যখন কেউ শেষ করবে, তখনই সে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও দিদার লাভ করে ফানা ও বাকার স্তরে পৌঁছবে। আধ্যাত্মিক এই চারটি সফর সম্পন্ন করতে হলে মানুষকে প্রথমে জানতে হয় নিজের আত্মা বা রূহ সম্পর্কে। এই জানাটা সহজ করে দিতে কিতাবটিতে সৈয়দ সাহেব রূহ, ক্বলব, সির, খাফি, আখফা ও নফসের পরিচয় ও তাদের ক্রিয়াকর্ম তুলে ধরেছেন। নফসের ঘর থেকে জিকিরের ধাক্কায় কিভাবে ময়লা—আবর্জনা দূর হয়ে কলবের মধ্যে নূর জ্বলে ওঠে, এবং কিভাবে একজন বান্দা জিকির—তাসবিহ—আমল করে আল্লাহর ওলি হয়ে যায়, ঈমানদীপ্ত আলোচনার মাধ্যমে তিনি সেটা ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে এক্ষেত্রে তিনি সবার আগে যে বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন, সেটি হচ্ছে সাধনভজনের জন্য গুরু বা মুর্শিদ জরুরি। শিক্ষক ছাড়া যেমন শিক্ষা অর্জন সম্ভব হয় না, তেমনি আধ্যাত্মিক গুরু ছাড়া সাধনভজন হয় না। শিক্ষার জন্য যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হয়, তেমনি সাধনভজনের জন্য আধ্যাত্মিক সাধকের কাছে মুরিদ হতে হয়। মুর্শিদের নির্দেশনায় আধ্যাত্মিক সাধনার বিভিন্ন স্তর পেরিয়ে, মোরাকাবা, মোশাহাদা ইবাদত ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহ পর্যন্ত পৌছতে হয়। কিতাবটিতে এই স্তরগুলো নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনা রয়েছে।
সৈয়দ মবনুর জন্ম সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে ১৯৭০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী । মা-বাবার সাথে স্থায়ী বসবাসের জন্য ইংল্যান্ড গেলেও দেশে ফিরে আসেন লেখালেখির জন্য। লিখছেন কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ও গান। বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার সৈয়দ মবনু। রাজনীতি ও সমসাময়িক বিষয়ে চিন্তা, মতামত ও বিশ্লেষণের জন্য সুখ্যাতি রয়েছে। সম্পাদনা করেছেন সৃজনমুখর ছোটকাগজ ‘নগর’। পলি মাটির দেশ বঙ্গভূমির নরোম হৃদয়ের মানুষকে নিয়ে ভাবেন সব সময়। এই দেশের পথে পথে হাঁটেন। আত্মা দিয়ে আত্মা খুঁজেন। ভালোবাসার কথা বলেন। ইতোমধ্যে তাঁর প্রায় অর্ধশত গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে। উল্লেখযোগ্য- দয়াদর্শন, দ্রাবিড় বাংলার রাজনীতি, উর্দু ভাষা ও সাহিত্য : উৎস ও ক্রমবিকাশ, লাহোর থেকে কান্দাহার, বৃটেনের নদী উপাখ্যান ও অন্যান্য, মুক্তিযুদ্ধ এবং উলামায়ে কেরাম, আত্মার অনুবাদ (কবিতা), ঝরাপাতার শূন্য সময় (কাবিতা), পাতালাতার পিরমুর্শিদি (কবিতা), জালালের তরী (গান), মার্কস চিন্তার সহি তফসির, মুক্তচিন্তার ইশতিহার, নেতৃত্ব, রোহিঙ্গা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ, সকলের শেখ মুজিব প্রভৃতি।