“শিখ ধর্মের উত্থান এবং তার ঐতিহাসিক পথচলা: ভক্তি আন্দোলন থেকে শিখ আন্দোলন এবং তারপর”একটি দীর্ঘ গবেষণা প্রসূত গ্রন্থ, যা নিঃসন্দেহে ভারতীয় ভক্তি আন্দোলন থেকেই যে শিখ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, তা হৃদয়ঙ্গম করার এক অনবদ্য প্রয়াস। এই গ্রন্থের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো শিখ ধর্মকে যত দিক থেকে বিবেচনা করা যায়, তার সবই এতে স্থান পেয়েছে। প্রধানত একটি ইতিহাসভিত্তিক কাজ হিসাবে এখানে শিখ ইতিহাসকে পর্যালোচনা করা হয়েছে ষষ্ঠ শতাব্দীতে দক্ষিণ ভারতে সূচিত হওয়া ভক্তি আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতায়, যে ভক্তি আন্দোলনের প্রবাহ উত্তর ভারতে নিয়ে এসে ভগৎ রামানন্দ একে সর্বভারতীয় রূপ দেন। আর সর্বভারতীয় ভক্তি আন্দোলনই ছিল ভারতের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ আন্দোলন, যেটি হিন্দু, মুসলমান নির্বিশেষে সব জাতি, বর্ণ ও গোত্রকে একই পাটাতনে আনতে চেয়েছে সর্বজনীন ভ্রাতৃত্বের মন্ত্র উচ্চারণ করে। এই আন্দোলন যেমন ছিল বর্ণাশ্রম প্রথার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও সুচিন্তিত একটি ধারা, তেমনি এর ভাষা ছিল প্রাণবন্ত, সাবলীল এবং সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা। গান, কবিতা, দোহার মধ্য দিয়ে এই ধারার সন্তরা তাঁদের শিক্ষা ও দেশনা প্রচার করতেন। মাতৃভাষাতেই মানুষকে মানবিক ও সর্বজনীন করার শিক্ষা দিতেন। এই আন্দোলন এখনও ভারতবর্ষে চলমান। আর এই ধারারই একজন বড় সন্ত ছিলেন গুরু নানক। যদিও শিখ আন্দোলনের বিভিন্ন ধারার বেশ কয়েকটি শেষ পর্যন্ত ভক্তি আন্দোলনের সাথে সাযুজ্য রক্ষা করতে পারেনি, আর এই বিচ্যুতি ঘটেছে নানকের মৃত্যুর পরে। পুরো বই জুড়ে লেখকের অন্তর্দৃষ্টি ও মনোবিশ্লেষণের স্বাক্ষর রয়েছে। ভক্তি আন্দোলন ও শিখ আন্দোলনের সবল ও দুর্বল নানা দিকও লেখক নির্মোহভাবে বোঝার চেষ্টা করেছেন। ইতিহাস, ধর্মতত্ত¡, দর্শন এবং নৃবিজ্ঞানের পাঠকের জন্যই কেবল নয়, সাধারণভাবে আগ্রহী যে কারোরই গ্রন্থটি বিশেষ কাজে লাগবে।