পিতা-মাতারা তাঁদের সন্তানের জন্য কামনা করেন সুখের শৈশব। কিন্তু সুখের শৈশব বলতে আমরা কী বুঝি? আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের সুন্দর সুন্দর পোশাক পরাই তাদের দেখি হাসি- খুশি, প্রাণোচ্ছল । এ সবই ভালো, তবে এ হচ্ছে সুখের অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ মাত্র। লোকে প্রায়ই বলে- অভাব-অনটন আর অকাল দুশ্চিন্তার মধ্যে যে ব্যক্তি বড় হয়েছে সে শৈশব থেকে বঞ্চিত। কিন্তু অন্তহীন আলস্য, আমোদ- প্রমোদ ও আনন্দ-ফুর্তির মধ্যে অতিবাহিত শৈশবকে কি আমরা সুখী বলে গণ্য করতে পারি? অনেকের কাছে নির্মেঘ ও নিশ্চিত শৈশবই হচ্ছে সুখের শৈশব । তবে এমতাবস্থায় জীবন অসার হয়ে পড়ে। একমাত্র বুদ্ধি, মনোবল, অনুভূতি ও পেশির সামঞ্জস্য প্রয়োগই শিশুকে সাবালক হতে এবং মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার প্রকৃত আনন্দ দিতে পারে। নূতনত্ব, বিস্ময়, কৌতূহল আর আবিষ্কারে ভরপুর ক্রীড়া, শ্রম, জ্ঞান, সৃজন, মেলামেশা ও গতি—এগুলোই হচ্ছে শৈশবের প্রকৃত ধর্ম। আর এই সমস্ত কিছুতে সর্বক্ষণ শিশু ও কিশোরের সঙ্গে যদি তাদের স্নেহশীল পিতামাতা থাকেন তাহলেই আমরা সুখী শৈশবের কথা বলতে পারি। বহু মা-বাবা এরূপ ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করেন যে, তাঁদের সন্তানের ভবিষ্যৎ বংশগতির দ্বারা আগে থেকেই পুরোপুরি নির্ধারিত। তারা মনে করেন, সন্তান পিতামাতার কাছ থেকে কেবল নিপুণতা আর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই শুধু পায় না, চেহারার আদলও পেয়ে থাকে। এরূপ দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে অনায়াসেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় : শিশু বিকাশ লাভ করে নিজে নিজে, সে আমাদের চেষ্টার ওপর নির্ভরশীল নয়। তাকে কেবল স্বাস্থ্যবান করে তুললেই হলো- বাকি সব আপনা-আপনিই ঘটে সততা, শ্রমশীলতা, মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা, মাতৃভূমি রক্ষার্থে আত্মোৎসর্গের মনোভাব- এই গুণাবলি নিয়ে কেউ জন্মায় না। তা অর্জিত হতে পারে সুশিক্ষার মাধ্যমেই। দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে যখন আমরা দেখি- ভালো মা-বাবার সন্তান ভালো হয়, তখন এর কেবল একটি অর্থ সযত্নে রক্ষা করা হয় ও ছেলেমেয়েদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সামাজিক নৈতিকতার উচ্চ মূল্যবোধ। আমরা অবশ্য এ কথাটি অস্বীকার করি না যে, প্রত্যেক শিশুর মধ্যেই গানবাজনার প্রতি, চিত্রকলা, বিজ্ঞান কিংবা প্রযুক্তির প্রতি একটা প্রবণতা থাকেই। কিন্তু মানুষের নৈপুণ্যে, তার প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে কেবল সমাজে এবং সমাজেরই কল্যাণে। সমাজ এর জন্য ব্যবহার করে অতিক্ষমতাধর একটি উপায়—সেটি হলো সুশিক্ষার মাধ্যমে সন্তান লালনপালন ।