উপন্যাসটি মূলত প্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্য। তবে যারা কেবল বয়সের দিক দিয়ে প্রাপ্ত কেবল তাদের জন্য না; যারা কিনা বয়সের সাথে সাথে মানসিকভাবেও প্রাপ্ত বয়ষ্ক তাদের জনই এই বই। কেননা কেবল তারাই এই উপন্যাসের মর্মভেদ করতে পারবে। নচেত যারা কেবল সময় পার করার জন্য বই পড়েন তাদের কাছে এই উপন্যাসটি ‘চটি’ বই বলেই ভ্রম হবে। কেননা আমাদের মধ্যকার যে কালো রূপ, সমাজের কঠিন বাস্তবতার অন্ধকার দিক, যুব সমাজের অধঃপতন সব; স-ব কিছু বেশ সরাসরিই উঠে এসেছে এই উপন্যাসটিতে। উপন্যাসটি মূলত শুরু হয় গ্রাম থেকে আসা বাবা-মা হারা এক অসহায় বোন ও ছোট ভাইয়ের গল্প দিয়ে। শহরে আসে ওরা ভালোভাবে বাঁচার আশায়। কিন্তু এই শহরের; এই সমাজের কঠিন অন্ধকার বাস্তবতার থাবা থেকে ওরা বাঁচতে পারে না। এই সমাজ মানে আমরা নিজেরাও এই সকল অসহায় মানুষগুলো জীবনের মোড় কোথায় ঘুড়িয়ে দিই তা আমরা নিজেরাও জানি না- জানার চেষ্টাও করি না কখনো। অনেক পাঠকই মনে করেন যে, এতোটা সরাসরি না লিখলেও হতো কিন্তু লেখকের মতে, লুকিয়ে-চাঁপিয়ে কখনই সমাজের প্রকৃত সত্য তুলে ধরা সম্বব না বা উচিতও না। আর সত্যি বলতে কি, যারা এই উপন্যাসের এত এত বাস্তব রূপের মাঝে নিজের আসল চেহারাটি খুঁজে পান কেবল তারাই ছিঃ ছিঃ করেন। এটাই সত্য যে, আমরা যতই অন্যকে বা অন্যদের গালাগাল দিই না কেন যখন নিজের চরিত্রের সেই খারাপ দিকটিই সামনে চলে আসবে তখন আর তা শুনতে বা পড়তে ভালো লাগে না কারোরই। আর তখনই আমরা বিদ্রোহী হয়ে উঠি; হয়তো নারীবাদিও। সবশেষ কথা, সত্যিকার অর্থ-এই যারা পাঠক অর্থাৎ বয়স এবং মানসিক দিক দিয়ে প্রাপ্ত বয়ষ্ক তারা বাস্তবিকই উপন্যাসটির মর্মভেদে বেশ গর্ববোধ করেন।
আজ প্রায় ২৬ বছর পর লেখক ধ্রুপদ তাঁর লেখা বই সারা বছর বাজারজাতকরণের অনুমতি দিয়েছেন। অতএব আশা করা যায়, এবার থেকে রকমারী তেও তাঁর লেখা বইসকল পাওয়া যাবে। লেখক ধ্রুপদ, জন্ম : ৫ নভেম্বর, ১৯৭২ বর্ণচোরা; স্পষ্টভাষী, নিজের ইচ্ছে মতো লেখেন, নিয়ম-কানুনের ধার ধারেন না। তারপরও পাঠক যেন তাঁর লেখনী পড়ে নিজের মনোজগতে তরঙ্গ অনুভব করেন। ফলে পাঠকের সীমাহীন চাহিদার কাছে নত হয়ে ভোরের শিশির প্রকাশণী প্রতি বছর তাঁর লেখা পুরোনো বইগুলো নতুন করে ছাঁপাতে বাধ্য হয়। কেননা লেখক ধ্রুপদ-এর কাছ থেকে নতুন লেখার আশা করা মানেই মরীচিকার পেছনে ছোটা! দীর্ঘ ২৬ বছরে তিনি মাত্র আটটি বই লিখেছেন এবং এই ২৬ বছরে তিনি আজ পর্যন্ত পাঠক কিংবা মিডিয়া কারো সামনেই নিজের আত্মপ্রকাশ ঘটাননি। ভবিষ্যতে করবেন কিনা তারও কোনো ঠিক নেই। মূলত নিজেকে ছড়িয়ে দেয়ার ইচ্ছায় নয় বরং নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অভিলাষে লেখক তাঁর সাহিত্য চর্চা করেন। লেখার বিষয়বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে যখন তিনি নিজেকে আবিষ্কার করেন পুনরাবিষ্কারের পথে ঠিক তখুনই তিনি লিখতে বসেন। নচেৎ বছরের পর বছর পার হয়ে যাবে কিন্তু তিনি কলম ধরবেন না। পাঠকের প্রবল চাহিদার কাছেও কখনো নিজের দায়িত্ববোধ থেকে বিচ্যুত হন না। তিনি একজন শিল্প কৌশলী। অলঙ্করণে তাঁর দক্ষতা অনস্বীকার্য... ভোরের শিশির প্রকাশনার যত ধরনের বইয়ের প্রচ্ছদ ও আনুসাঙ্গিক শিল্প কৌশল ধারণা সব এই লেখক ধ্রুপদ এরই করা। যারা তাঁর লেখা পড়েছেন তাদের নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে যারা পড়েননি তাদের বলবো, তাঁর লেখা যে কোন একটি বই পড়ে দেখুন। আপনিও তাঁর নিয়মিত পাঠক হবেন এই নিশ্চয়তা দিতে পারি। তাছাড়া একজন লেখককে চিনতে অথবা তাঁর দর্শনগত ভাবনা অনুভব করতে হলে লেখকের মনন জগতের সুলুক সন্ধান জরুরি। কারণ লেখকের সকল ভাবনার অনুবীজগুলোর প্রকাশময়তা কাগজে কলমে রূপ পায় তাঁর সাহিত্য কর্মে।... তাঁর লেখা প্রথম বই কুহক কূতুহল যা আজন্ম ক্ষুধা নামে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সনের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এবং বেশ সফলতার সাথে বইটির প্রশার ঘটে। এখন পর্যন্ত পাঠকদের কাছে এর চাহিদা অনেক। তার দীর্ঘ সাত বছর পর অর্থাৎ ২০০৩ সালে তাঁর ২য় উপন্যাস বৈষম্য বের হয়। এই উপন্যাসটির মাধ্যমেই পাঠকদের মাঝে তাঁর পরিচিতি বেশি ঘটে। এর ঠিক পরের বছরই এর ২য় খণ্ড বেধ বের হয় এবং এটিও ঠিক একইভাবে জনপ্রিয় হয়। পরবর্তীকালে বইটির দুই খণ্ড একসাথে বৈষম্যবেধ নামে প্রকাশিত হয় এবং বর্তমানে এই নামেই উপন্যাসটির বেশ পরিচিত। এর ঠিক প্রায় তিন বছর পর ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা ৩য় উপন্যাস ঘুড়ি যা পাঠকদের চিন্তাধারায় সাংঘাতিকভাবে নাড়া দেয়। কেন? তা যারা বইটি পড়েছে তারাই ভালো বলতে পারবে। আর এই ঘুড়ি বইটি কেবল অপ্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্যই নিষিদ্ধ না; যারা কিনা মানসিকভাবে বিকলাঙ্গ তাঁদের জন্যও বইটি নিষিদ্ধ। যাই হোক তার ঠিক পরের বছরই বের হয় তাঁর ৪র্থ উপন্যাস লালবউ যা সেই ববছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। মজার ব্যাপার হলো সে বছরই অন্যপ্রকাশ বাজারে নিয়ে আসে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের হলুদ হিমু উপন্যাসটি কিন্তু গ্রন্থমেলায় সবার মুখে মুখে কেবল লালবউ উপন্যাসের নাম শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে তার খোঁজ নিতে আসে বইটির বিষয়ে। আর দুঃখের বিষয় হলো মেলার ঠিক দু’দিন আগে লালবউ এর স্টক শেষ হয়ে যায়। আর ঠিক এই সুযোগে হুমায়ূন আহদের সেই হলুদ হিমুবেস্ট সেলার হয়ে যায়। এরপর ২০১০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বের হয় তাঁর লেখা ৫ম উপন্যাস কাপালিক যা এখন কাকচরিত্র নামেই বেশ পরিচিত বাজারে। এরপর ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা ৬ষ্ঠ উপন্যাস পাঁশুটে। তারপর ২০১৬ এবং ২০২০ এ যথাক্রমে তাঁর ৭ম ও ৮ম উপন্যাস নন্দিপাড়া আজো বৃষ্টি পড়ে এবং নাটলা বেলগাছি প্রকাশিত হয়। এরপর হাজার চাহিদা থাকা সত্যেও এখন পর্যন্ত আর কোন লেখা তিনি লিখেননি। কিন্তু পাঠকেরা ঠিকই চাতক পাখির ন্যায় আশায় বুক বেঁধে আছে