শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বিশ শতক একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ সময়। মূলত এ শতকের শুরু থেকেই সাম্রাজ্যবাদ, বিপ্লব, বিদ্রোহ ও বিজ্ঞান ক্রমান্বয়ে বিশ্বরাজনীতিতে এমন এক অস্থিরতা তৈরি করে-যার অনিবার্য অভিঘাত বিশ্বসাহিত্যের নানান চারিত্র্য পরিবর্তন করে। এ শতকের প্রথম দশকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৮) পুরো ইউরোপকে এক ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির সম্মুখীন করে তোলে। যুদ্ধে আগ্রাসী জার্মানি পরাজিত হয় এবং অপমানজনক সন্ধির বোঝা কাঁধে নিয়ে ফিরে যায় তার পূর্ব ইউরোপের নিজ বাসভূমে। কিন্তু বিজয়ী ইংল্যান্ড-ফরাসি পক্ষকেও সে যুদ্ধের বিভীষিকা ও বিপর্যয়ের সামনে দাঁড়াতে হয়েছিল। অন্যদিকে এ যুদ্ধ চলাকালীন বিশ্বরাজনীতিতে আরেক নতুন শক্তির উদ্ভব হয়। সে শক্তি হলো রুশ বিপ্লবোত্তর (১৯১৭) সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া। রাশিয়ায় লেনিনের নেতৃত্বে ১৯১৭ সালে কুখ্যাত জারশাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের বিপ্লব ও বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে রাশিয়া নতুন করে জন্ম নিল সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন রূপে। প্রতিষ্ঠিত হলো হাজার হাজার বছর ধরে শোষিত মানুষের শাসন। বিশ্বযুদ্ধের হতাশা আর রুশবিপ্লবের প্রত্যাশার মধ্যে আইনস্টাইন নিয়ে এলেন তাঁর যুগান্তকারী 'আপেক্ষিক তত্ত্ব'। মনস্তত্ববিদ সিগমুন্ড ফ্রয়েড তাঁর মনস্তাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে দেখালেন মানুষের অন্তর্সত্যের অপ্রত্যাশিত ও অপ্রকাশিত অথচ অনস্বীকার্য সব উক্তি। তৎকালীন ভারতবর্ষ যেহেতু বৃটিশ উপনিবেশে আচ্ছাদিত, সে কারণে বিশ্বপ্রেক্ষাপটের এইসব ঘটনা যৌক্তিক কারণেই ভারতকে স্পর্শ করে। বলা সঙ্গত যে, শুধু স্পর্শই করেনি, বরং ভারতকে প্রভাবিত করে প্রচণ্ডভাবে। ভারতের ভবিষ্যতের অনেক বীজই এইসব ঘটনার মধ্যে অঙ্কুরোদগমিত হয়।