সম্মানিত পাঠক! ‘তরজমাতুল কুরআন’ হাতে নেওয়ার আগে ভেবে দেখুন আপনি কি পড়তে যাচ্ছেন। এটি মানুষের রচিত কোন গ্রন্থ নয়। এটি দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে আল্লাহ প্রেরিত কুরআনী অহি সমূহের সমষ্টি। এটি বিশ্বাসী হৃদয়ের জীয়নকাঠি। অবিশ্বাসী হৃদয়ের চাবুক। এটি মানুষের চলার পথের ধ্রবতারা। এটি হতাশ হৃদয়ে আলোর দ্যুতি। এটি মুসলিম উম্মাহর জীবনগ্রন্থ। একে কেন্দ্র করেই বিশ্বাসী সম্প্রদায় বেঁচে থাকে। যতদিন মুসলিম উম্মাহ কুরআনের বাহক ও অনুসারী থাকবে, ততদিন তাদের উন্নতি ও অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে। সূর্যের সাথে পৃথিবীর যে সম্পর্ক, কুরআনের সাথে মুসলমানের তেমনি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। যা দেখা যায়না। কেবল অনুভব করা যায়। যা ব্যাখ্যা করা যায়না, কেবল লক্ষ্য করা যায়। কুরআনকে কেন্দ্র করে মুসলিম উম্মাহর জীবন আবর্তিত হয়। যেমন সূর্যকে কেন্দ্র করেই পৃথিবীর আবর্তিত হয়। কুরআন থেকে যখনই মানুষ বিচ্ছিনড়ব হবে, তখনই সে মনুষ্যত্ব হারিয়ে পশুত্বের অন্ধগলিতে নিক্ষিপ্ত হবে। অনুবাদ গ্রন্থটির কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য : ১. সাবলীল ও সহজবোধ্য বাংলায় কুরআনের মর্ম সাধ্যমত স্পষ্ট করা হয়েছে। ২. এক আয়াতের ব্যাখ্যায় অন্য আয়াত, ছহীহ হাদীছ ও সালাফে ছালেহীনের বুঝকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ৩. আল্লাহর নাম ও গুণাবলী বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদা সমুন্নত রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। ১৯৪৮ সালের ১৫ জানুয়ারী সাতক্ষীরার বুলারাটি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাওলানা আহমাদ আলী বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একজন বিখ্যাত আহলে-হাদিস আলেম ছিলেন। তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা সিনিয়র মাদরাসা থেকে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি দাখিল, আলিম ও ফাযিল এবং জামালপুর থেকে ১৯৬৯ সালে কামিল পরীক্ষা কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মাদরাসা বোর্ডে আলিম ও কামিল পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্ব দেখান যথাক্রমে ১৬তম ও ৫ম হয়ে। অতঃপর তিনি কলারোয়া সরকারি কলেজ থেকে আইএ এবং খুলনার সরকারি মজিদ কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। পিএইচডি গবেষণার জন্য ইংল্যান্ডে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ অর্জন করলেও পরবর্তীতে আর যাননি। অতঃপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজে খন্ডকালীন লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। একই বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলাম শিক্ষা বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। এই বিভাগ থেকেই ২০১৬ সালে অবসর নেন। তিনি লেখালেখি করেন রাজনীতি, অর্থনীতি্ সাহিত্য, রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক ছাড়িয়েছে। তিনি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ‘আহলে-হাদীস আন্দোলন-বাংলাদেশ’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান আমীর। মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমূহ মূলত ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়, আহলে-হাদীস আন্দোলন, নবী-রাসূলদের জীবনী, ইসলামি খেলাফতের প্রাচীন ও বর্তমান অবস্থার দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এই ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক পেশাগত কাজে দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করেছেন। আরবি, ফার্সি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর দক্ষতা রয়েছে। পাঠক সমাদৃত মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমগ্র হলো ‘আহলে হাদীস আন্দোলন কী ও কেন’, ‘জীবন দর্শন’, ‘ইনসানে কামেল’, ’ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), ‘তিনটি মতবাদ’ ইত্যাদি। ২০০০ সালে সৌদি সরকারের রাজকীয় মেহমান হিসেবে হজব্রত পালন করেন তিনি।