আঠারো ও উনিশ শতক। তখন মুসলিম বিশ্বের সবখানে জেঁকে বসেছে উপনিবেশবাদ। উসমানি সালতানাত তখনও খিলাফতের একটি ছায়া হিসেবে টিকেছিল। কিন্তু ১৯২৪ সালে পতন ঘটে আশার শেষ প্রদীপ উসমানি খিলাফতের। রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে অপসারিত হলো ইসলাম। ব্যক্তিজীবনের ক্ষুদ্র গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ করা হলো ইসলামকে। তখন চারদিকে হতাশা আর অন্ধকার। এমন এক নৈরাশ্যের ছাই থেকেই জ্বলে উঠল একটি অগ্নিস্ফুলিঙ্গ—ইমামুদ দাওয়াহ হাসান আল বান্না। ইমাম হাসান আল বান্নার হাত ধরে যাত্রা শুরু করল এক মহান আন্দোলন—ইখওয়ানুল মুসলিমিন। মিশর থেকে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ল ফিলিস্তিন, সিরিয়া, জর্ডান, সৌদি আরব হয়ে পুরো আরব বিশ্বে। তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, লিবিয়া হয়ে উত্তর আফ্রিকায়। তুরস্ক, মধ্য এশিয়া, ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টে বিস্তৃত হলো এই আন্দোলনের প্রভাব। দূরপ্রাচ্যের মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল ইখওয়ানুল মুসলিমিনের পুনর্জাগরণের বার্তা। দাওয়াত, তারবিয়াত ও শাহাদাতের পথ বেয়ে ইখওয়ান পাড়ি দিয়েছে দীর্ঘ পথ। হাসান আল বান্না, আবদুল কাদির আওদাহ, সাইয়িদ কুতুব, প্রেসিডেন্ট মুরসি শাহাদাতের দীর্ঘ কাতার ইখওয়ানের। বাহি আল খাওলি, সাইয়িদ সাবিক, উমর তিলমেসানি, সাঈদ রমাদান, মুহাম্মাদ আল গাযালি, ইউসুফ আল কারযাভীর মতো বিশ্ববিখ্যাত দাঈ ও আলিমগণ এ আন্দোলনের সন্তান। ইখওয়ানুল মুসলিমিনের আদর্শ, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত হতে পাঠের আমন্ত্রণ—ইখওয়ানুল মুসলিমিনের ইতিহাস : দাওয়াত, তারবিয়াত ও সংগ্রামের সত্তর বছর।
শায়খ প্রফেসর ড. ইউসুফ আবদুল্লাহ আল কারযাভি (১৯২৬-) মিশরীয় বংশোদ্ভূত একজন প্রভাবশালী আধুনিক ইসলামি তাত্ত্বিক ও আইনজ্ঞ। তিনি মুসলিম ধর্মতত্ত্বিকদের অভিজাত সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সে (International Union of Muslim scholars)-এর সাবেক চেয়ারম্যান। জন্ম ১৯২৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। মিসরের উত্তর নীলনদের তীরবর্তী সাফাত তোরাব গ্রামে। দুই বছর বয়সে বাবা ইন্তিকাল করলে চাচা তার লালন-পালন করেন। দশ বছর বয়সে তিনি সম্পূর্ণ কোরআন হিফজ করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা করেন আল-আজহার কারিকুলামে। প্রাচীন ইসলামী বিদ্যাপীঠ আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উসুলুদ দ্বীন অনুষদ থেকে অনার্স, আরবি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। মিসরের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘Institute of Imams’ এর পরিদর্শক হিসেবে কর্মজীবনে পদার্পণ করেন। কিছুদিন তিনি আওকাফ মন্ত্রণালয়ের ‘Board of Religious Affairs’ এ কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৭ সালে তিনি কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শরীয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের প্রতিষ্ঠাকালীন ডীন নিযুক্ত হন। ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি এখানে কর্মরত থাকেন এবং একই বছর তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্র’। ১৯৯০-৯১ সালে আলজেরিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের Scientific Council এর চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯২ সালে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্রের ডিরেক্টর হিসেবে পুনরায় কাতার ফিরে আসেন। তিনি জর্ডানের রয়্যাল অ্যাকাডেমি ফর ইসলামিক কালচারাল অ্যান্ড রিচার্জ (Royal academy for Islamic culture and research), ইসলামি সম্মেলন সংস্থা (OIC), রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামি এবং ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টার, অক্সফোর্ড এর সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৪১১ হিজরিতে ইসলামী অর্থনীতিতে অবদান রাখায় ব্যাংক ফয়সল পুরষ্কার লাভ করেন। ইসলামি শিক্ষায় অবদানের জন্য ১৪১৩ হিজরিতে মুসলিম বিশ্বের নোবেল খ্যাত কিং ফয়সাল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন । ১৯৯৭ সালে ব্রুনাই সরকার তাকে ‘হাসান বাকলি’ পুরষ্কারে ভূষিত করে।