দেশে চলছে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের মহাযজ্ঞ। এর মধ্য দিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা হলো। এই নতুন শিক্ষাক্রমে বদলে গেছে প্রথাগত শিখন পদ্ধতি ও শিক্ষার্থী মূল্যায়নের ধরন। পরিবর্তন এসেছে পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু ও পাঠবিন্যাসেও। এ নিয়ে দেশের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন অংশীজনের মধ্যেও নানা প্রশ্ন, সন্দেহ, শঙ্কা ও দোলাচলের শেষ নেই। ২০২২ সাল জুড়ে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে যখন দেশের সর্ব মহলে এক ধরনের উদ্ভবেগ, শঙ্কা ও সন্দেহ বিরাজ করছিল, ঠিক তখনই শিক্ষক, শিক্ষা প্রশাসক ও ঋদ্ধ গবেষক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক একের পর এক লিখেছেন গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ-নিবন্ধ। মহামূল্যবান এই লেখাগুলো দেশের প্রথম সারির বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা যত্নসহকারে প্রকাশও করেছে। এইসব ছড়ানো-ছিটানো লেখা এক মলাটে পাঠকের হাতে তুলে দিতেই নতুন শিক্ষাক্রম : শিক্ষকের ভূমিকা শিরোনামে পুস্তক আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ৪-এর মানসম্মত শিক্ষা অর্জনে আমাদের শিক্ষাক্রম যুগোপযোগী করার কোনো বিকল্প নেই। এ বিষয়ে যুক্তি-তর্ক, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সহকারে লেখক তাঁর নিজস্ব মতামত ও মূল্যায়ন তুলে ধরেছেন এ বইটিতে। নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের প্রেক্ষাপট, নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকের করণীয়, শিক্ষা প্রশাসনের ভূমিকা প্রভৃতি বিষয় লেখক সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে ধরেছেন এ বইয়ের পাতায় পাতায়। লেখকের দীর্ঘ পেশাগত জীবনের অভিজ্ঞতা ও আনের আলোকে রচিত এই বইটি পাঠে শুধু শিক্ষকেরাই নন; সমৃদ্ধ হবেন দেশের সকল শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষাগবেষকও।
সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, জন্ম ১৯৬৩ সালে। গ্রাম, মফস্বল ও শহরের নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কুল ও কলেজ জীবন অতিবাহিত করে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত ভাষাবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষকতাকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করে ১৯৯৩ সালে তিনি যোগ দেন বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও শহরের বেশ কিছু কলেজে শিক্ষকতা করার পর তিনি লিয়েনে সৌদি আরবের কিং খালিদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। লিয়েন থেকে ফিরে এসে মাউশির চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক নিযুক্ত হন তিনি। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে তিনি যথাক্রমে নায়েমের মহাপরিচালক ও মাউশির মহাপরিচালকের পদ অলংকৃত করেন। ২০২২ সালে অবসর গ্রহণের পর থেকে তিনি জাতিসংঘের শিশু, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক বিশেষ সংস্থা ইউনিসেফের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। লেখালেখির জগতে তাঁর পদচারণার সময়টা নাতিদীর্ঘ হলেও একাডেমিক ক্ষেত্রে তাঁর প্রকাশনার সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। শিক্ষা বিষয়ক তাঁর প্রায় ২০টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত ও উদ্ধৃত হয়েছে। এছাড়া, তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য গবেষণা অভিসন্দর্ভও রয়েছে। ইতিপূর্বে প্রকাশিত তাঁর বইয়ের সংখ্যা ৩টি বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত প্লেটো : দর্শন ও রাষ্ট্রচিন্তা, অবসর থেকে প্রকাশিত অস্তিত্ববাদের স্রষ্টা সোরেন কিয়ের্কেগার্দ এবং বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি দিবালোকে দুঃস্বপ্ন। এগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় বইটি প্রথম আলো নির্বাচিত তরুণদের শ্রেষ্ঠ ১০টি বইয়ের তালিকায় স্থান করে নেয়। নতুন শিক্ষাক্রম : শিক্ষকের ভূমিকা তাঁর লেখা চতুর্থ বই।