সদ্যভূমিষ্ট পূর্ব পাকিস্তান। ব্রিটিশ বেনিয়াদের শোষণের গন্ধ তখনো বাতাস থেকে মুছে যায়নি। এমন প্রেক্ষাপট নিয়ে হিন্দু মুসলমানদের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ঘটনাবলীর এক দালিলিক তথ্যভা-ার ‘ধুনির খোসা’। তৎকালীন গ্রামীণ জীবন যাপনে ধর্ম, গোড়ামি, কুসংস্কার, মহাজনী দাদন ব্যবসায় নিঃস্ব, নিষ্পেষিত প্রান্তিক চাষিদের এক করুণ কাহিনীর চিত্রকল্প এঁকেছেন ঔপন্যাসিক আবু সাঈদ। ‘ধুনির খোসা’কে নিছক কল্পকাহিনী বললে ভুল হবে। উপন্যাসের পরতে পরতে উঠে এসেছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যাপিত জীবনাচার। এখানে দাদন ব্যবসায়ী মহাজন ইংরেজ বেনিয়াদের প্রেতাত্মা সেজে জগদ্বল পাথরের মতো বুকে বসেছিল গ্রামীণ জনপদে। সেখান থেকে সংগ্রামী মানুষের জোটবদ্ধ আন্দোলনের এক দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়-- ‘ধুনির খোসা’য়। মহাজন প্রান্তিক চাষিদের দেনার দায়ে কীভাবে তাদের জমি করায়ত্ব করে, কীভাবে গ্রামের গরিব অসহায় মানুষকে ভয় ভীতি দেখিয়ে নারীদের ইজ্জত হনন করে, তারই এক উজ্জ্বল পটভূমি রচিত হয়েছে ‘ধুনির খোসা’। ‘ধুনির খোসা’ বলতে মূলত চাষিদের নিঃশেষ হয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকার দৃশ্যাবলী সুনিপুণ কলমের আঁচড়ে তুলে এনেছেন। এখানে যেমন রয়েছে প্রেম, তেমনি রয়েছে অন্ধ কুসংস্কার, শিক্ষাহীনতা, চিকিৎসার অভাব, মানুষে মানুষে মমত্ববোধ, অজ্ঞতা প্রকটভাবে চেপে বসেছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। আবার পেটের দায়ে, মহাজনের ভয়ে, অন্যায় কাজেও জড়িয়ে পড়েছে এই প্রান্তিক চাষিদের একটি অংশ। এসবই অত্যন্ত সবালীলভাবে উপন্যাসে তুলে এনেছেন। পাঠক এ উপন্যাসে নিশ্চয় ইতিহাসের পরম্পরায় তৎকালীন প্রান্তিক জনজীবনের একটি চিত্র নতুন আঙ্গিকে খুঁজে পাবেন।