আমাদের পরিচিত বাংলা, ইংরেজি, আরবি ইত্যাদি ভাষায় ধ্বনিবিজ্ঞান ও ধ্বনিতত্ত্ব পরিভাষা দুটি সূক্ষ্মতর বিচারে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। শব্দ দুটি কখনো কখনো অবশ্য সমার্থক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক সব যুগেই ধ্বনিবিজ্ঞান ভাষা গবেষণার একটি অপরিহার্য বিষয় বলে বিবেচিত হয়ে এসেছে। আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বাংলা, ইংরেজি ও আরবি বিভাগে সাধারণ ধ্বনিবিজ্ঞান ও সংশ্লিষ্ট ভাষার ধ্বনিতত্ত্ব পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত। পাঠ্য হলেও এ তিনটির মধ্যে আরবি ধ্বনিতত্ত্ববিষয়ক কোনো গ্রন্থ এখনো পর্যন্ত বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হয়নি; যদিও আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিগত প্রায় আটশত বছর যাবৎ এদেশে পড়ানো হচ্ছে। এ-কারণেই এ লেখক বিগত ১৯৯০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে আরবির প্রভাষক হিসেবে যোগদানের পর থেকেই আরবি ভাষাগবেষণা কর্মে নিয়োজিত হয়ে এ অভাবটি পরণের চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করেন। এ গ্রন্থটি সে নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টারই ফসল। গ্রন্থটি দ্বারা বাংলাভাষী ছাত্র-শিক্ষক ও আগ্রহী পাঠকরা উপকৃত হলে লেখকের শ্রম সার্থক হবে। গ্রন্থটিতে কোনো ভুলত্রুটি ধরা পড়লে অনুগ্রহপূর্বক লেখক অথবা প্রকাশককে জানাতে বিনীত অনুরোধ রইলো।
নরসিংদী জেলার বেলাব থানার চন্দনপুর গ্রামের সন্তান এ কিউ এম আবদুস শাকুর খন্দকার একই জেলার হাতিরদিয়া স্কুল থেকে প্রাথমিক, সর্বলক্ষণা মাদ্রাসা থেকে দাখিল, কুমরাদি মাদ্রাসা থেকে আলিম ও ফাযিল, ঢাকা আলিয়া থেকে কামিল (১৯৬৭), শিবপুর হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি, মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ থেকে এইচ.এস.সি, করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে বি.এ.অনার্স ও এম.এ (১৯৭৫) সম্পন্ন করেন। আলিম ও এস.এস.সি-তে সরকারি বৃত্তি লাভসহ তিনি ফাযিলে ৫ম, কামিলে ৭ম ও এম.এ.-তে ২য় স্থান লাভ করেন। ১৯৭৯ সনের বি.সি.এস. শিক্ষায় ১ম স্থান অধিকার করে সরকারি কলেজে ইতিহাসের প্রভাষক নিযুক্ত হন। আরব লীগের শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে খার্তুম ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউটে দুই বছর (১৯৭৯-১৯৮১) শিক্ষণবিজ্ঞান অধ্যয়নের পর সেখান থেকে অনারবদের আরবি ভাষা শিক্ষাদানের জন্য পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্প্যাশালিস্ট ডিপ্লোমা (এম. ফিল) অর্জন করেন। ১৯৮১ সাল থেকে ঢাবি আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে খণ্ডকালীন আরবি শিক্ষক, সউদি দূতাবাসে অনুবাদ ও প্রেস কর্মকর্তা, রেডিও বাংলাদেশ বহির্বিশ্ব কার্যক্রমে আরবি সংবাদ ও কথিকা পাঠক ও অনুবাদক এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সভা-সেমিনার-সম্মেলনে দোভাষীর কাজ শুরু করেন। তিনি ১৯৯০ সালে ঢাবি আ.ভা.ই.-তে আরবি ভাষার প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ২০১৬ সালে অত্র ইনস্টিটিউট থেকে আরবির অধ্যাপক হিসেবে অবসরে আসেন। সরকারি বৃত্তিসহ দেশে ও বিদেশে তিনি ৩টি গবেষণাকর্ম সম্পাদন করেন। তিনি বাংলা, ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায় পূর্ণ দক্ষতা এবং হিন্দি ও ফার্সি ভাষায় আংশিক দক্ষতার অধিকারী। অনারবদের আরবি ভাষা শিক্ষাদান এবং তাদের জন্য আরবি ভাষার পাঠ্যসূচি তৈরির কাজে লেখকের প্রশিক্ষণ, বিশেষজ্ঞতা ও দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। ঢাবির বিভিন্ন গবেষণা পত্রিকায় তাঁর ২২টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া তাঁর আরবি থেকে বাংলায় অনূদিত দুটি বই এবং জাতীয় পত্র-পত্রিকায় স্বরচিত ও অনূদিত বহুসংখ্যক নানাবিষয়ক লেখা প্রকাশিত হয়। বর্তমানটির পর তাঁর ৩টি আরবিসহ অপ্রকাশিত ৬টি পাণ্ডুলিপি রয়েছে, যেগুলো পর্যায়ক্রমে প্রকাশিত হবে ইন-শা’আল্লাহ। তিনি বাংলা একাডেমি, এশিয়াটিক সোসাইটি, ইতিহাস সমিতি, বিআইআইটি ও ঢাকাস্থ বেলাব সমিতির জীবন সদস্য। এশিয়া ও এশিয়ার বাইরে তাঁর কয়েকটি দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রয়েছে। স্বাধীন অধ্যয়ন, গবেষণাকর্ম এবং লেখালেখি ছাড়াও বর্তমানে তিনি বিআইআইটিসহ শিক্ষা, জ্ঞানচর্চা ও গবেষণাবিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত এবং নিজ এলাকায় ধর্মীয় ও সমাজোন্নয়নমূলক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত।