উৎসাহিত হবার, লেগে থাকার এবং জীবন যাপনের মতো অবস্থায় আমাদের নিয়ে যেতে পারে ― এই ঘরনকশার এই কাজ কি সম্পাদিত হচ্ছে কম্পিউটারে তৈরি আপাতসুন্দর নকশায় ― যা নিয়ে যাচ্ছে আমাদের হতাশাব্যঞ্জক চ্যাপ্টা ‘মাংসের’ মধ্যে? পালাজমা বলেছেন, এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে আজকের দিনে প্রযুক্তি এবং ভোক্তাসংস্কৃতিতে দৃষ্টিকেন্দ্রিক জগতের প্রাধান্যের মধ্যে, যা ঘরবিদ্যার তত্ত্ব ও অনুশীলনে ঢুকে পড়েছে। পঞ্চইন্দ্রিয়ের সমন্বয়ে সূত্রায়িত হয় আমাদের জাগতিক অভিজ্ঞতা কিন্তু তাকে বাদ দিয়ে অনেক ঘরশিল্পই তৈরি হচ্ছে শুধু একটি ইন্দ্রিয়কে বিবেচনায় রেখে ― দৃকইন্দ্রিয়। অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের অবদমন আমাদের পরিবেশকে হীন করে দিচ্ছে যার ফলে উদ্ভব হচ্ছে বিচ্ছিন্নতা এবং একাকীত্ব। চামড়ার চক্ষুগুলি (THE EYES OF THE SKIN ARCHITECTURE AND THE SENSES) প্রথম প্রকাশ হয় ১৯৯৬ সালে। এটি এখন বিবেচিত হচ্ছে ঘরবিদ্যার এক ধ্রুপদী গ্রন্থ হিসেবে এবং সারা দুনিয়ার ঘরবিদ্যার স্কুলে পাঠ্য হিসেবে অধ্যয়ন করা হচ্ছে। দুটি বড়ো রচনার সংকলন এটি। প্রথম রচনায় জরিপ করা হয়েছে গ্রিক সভ্যতার সময় থেকে শুরু করে অদ্যাবধি পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে দৃষ্টিকেন্দ্রিক সংতত্ত্বের বিবর্তন ― পৃথিবীতে ও ঘরবিদ্যার বৈশিষ্ট্যের উপর তার প্রভাব। অন্য রচনাটিতে পরীক্ষা করা হয়েছে যথার্থ ঘর-অভিজ্ঞতায় অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের ভূমিকা নিয়ে ― ঘরের বহুইন্দ্রিয়জ অভিজ্ঞতা কীভাবে আমাদের এনে দিতে পারে সংশ্লিষ্টতা এবং অন্তর্ভুক্তির অনুভূতি। গ্রন্থটি প্রকাশের সময় থেকেই ঘরবিদ্যার দর্শনে এবং একাডেমিক শিক্ষায় শরীর এবং ইন্দ্রিয়গুলির ভূমিকার প্রতি অধিকতর আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে। এই মৌলিক গ্রন্থটি শুধু ঘরামিদের এবং ঘরবিদ্যার ছাত্রদের সমগ্রবাদী ঘরনকশার দিকে অনুপ্রাণিত করবে না, সাধারণ পাঠককেও তাদের চারিপাশের পৃথিবী সম্পর্কিত তাদের উপলব্ধিকে সমৃদ্ধ করবে। ‘১৯৫৯ সালে ড্যানিশ ঘরামি স্টীন আইলার রাসমুসেন প্রণীত এক্সপেরিয়েন্সিং আর্কিটেকচার গ্রন্থ প্রকাশের পরে একবিংশ শতকের ঘরবিদ্যা বিকাশের ক্ষেত্রে এ কঠিন সংকটময় সময়ে এবং ছাত্রছাত্রী তথা ঘরামিদের জন্য প্রয়োজনীয় আর কোন গ্রন্থ এমন ভূমিকা রাখেনি।’ ― স্টিভেন হল
ইউহানি পালাজমা ফিনল্যান্ডের বিখ্যাত ঘরামি এবং ঘরতাত্ত্বিকদের একজন। ঘর, গ্রাফিক ডিজাইন, নগর পরিকল্পনা এবং প্রদর্শনী ইত্যাদি ক্ষেত্রে ― ঘরবিদ্যার অনুশীলন এবং তত্ত্ব তৈরির সবগুলি দিকেই ― ক্রমাগতভাবে তিনি জোর দিয়েছেন মানুষের প্রকৃত আত্মপরিচয়, সংবেদী অভিজ্ঞতা এবং ত্বগেন্দ্রিকতার উপর।