ভাবনার করিডোর মৈত্রেয়ী দেবী করোনা মহামারিতে পুরো পৃথিবী যখন ক্লান্ত এবং বিধস্ত। ঠিক তখন লেখক মৈত্রেয়ী দেবী দেশ ও পৃথিবীকে নিয়ে তার ভাষায় অসংখ্য শব্দ মালা লিপিবদ্ধ করেন। এর মাঝ থেকে নির্বাচিত কিছু কবিতা ও গীতি কবিতা নিয়ে পাঠক মহলের উদ্দেশ্যে ‘ভাবনার করিডোর’ নামক গ্রন্থটি প্রকাশের ইচ্ছে প্রকাশ করেন। ভাবনার করিডোর গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি পাঠ করে, তৃপ্তির ঢেকুর তুলে গ্রন্থ প্রকাশের চূড়ান্ত আলোচনায় লেখক ও প্রকাশক উপনিত হয়। এ গ্রন্থ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে নানাবিধ প্রসঙ্গ চলে আসবে। যেমন- মৃত্যু, মা, ফেরীওয়ালা, বৈশাখ, টিপ, রাসেল, জাগো নারী, কষ্ট, বন্ধু, অপেক্ষা, বঙ্গবন্ধু, পদ্ম সেতু সহ সময় উপযোগী বিষয়বস্তু তুলে ধরেছেন। লেখক মৈত্রেয়ী দেবী’র গ্রন্থ ভাবনার করিডোর’র উল্লেখ যোগ্য কয়েকটি পংক্তি এখানে তুলে ধরার হলো- ‘মা’ “বলতে পারিনা আমি, তুমি আমার বিশ্বব্যাংক, তুমি আমার বাড়ি, তোমার মাঝে মাগো আমার সব, নিশ্চিন্তে জমা রাখতে পারি।” কতোটা সহজ ভাষায় কবি ‘মা’ কবিতায় শব্দগুলো একের পর এক বুনেছেন তা আমরা সবাই বুঝতে পারলেও এর মহত্ব বুঝার মতো সক্ষমতা সবার আছে কিনা এ বিষয় সন্দিহান। কারণ, বর্তমান সময় চারিপাশে আমরা যা দেখছি, আর যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষা দিচ্ছি, তাতে আমি নিজেই এসব দেখে চমকিয়ে উঠি। অন্য এক কবিতায় কবি নারীদের উদ্দেশ্যে লিখেন- ‘জাগো নারী’ “ভেবেছিলে আমি নারী, না, আমি নারী নই, আমি মানুষ, আমি ঘুরে দাঁড়িয়েছি, আমি সমাজের সকল নারীর, উদাহরণ হতে চাই।” আর এ উদাহরণ স্বরূপ কবি তার কবিতায় নারীদের কে বলেছেন জাগো নারী। যেমনটা বর্তমান সময়ে নারীরা এগিয়ে রয়েছেন- প্রথম নারী স্পিকার, নারী রাষ্ট্রপতি সহ নারী সর্বস্তরে তাদের অবদান রেখেছেন। কবি মৈত্রেয়ী দেবী’র গ্রন্থ নিয়ে লিখতে বা আলোচনা করতে হলে সময়ের প্রয়োজন। প্রতিটি লাইন বা শব্দ উল্লেখ করতে হলেও দিস্তা বাদ দিয়ে রিম রিম কাগজের প্রয়োজন হবে। কিন্তু সে সময় বা রিম রিম কাগজ ব্যবহার না করে পাঠক মহলের পাঠ চক্রের মাধ্যমে আলোচিত হয়ে সাহিত্য অঙ্গনে বিশেষ অবদান রাখবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস। মো: সাব্বির আলম চৌধুরী সম্পাদক-প্রকাশক ও লেখক
তিনি ১৯১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর তার বাবার কর্মস্থল তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত ও মায়ের নাম হিমানী মাধুরী রায়। তার বাবা ছিলেন একজন দার্শনিক ও প্রাবন্ধিক। তার শৈশব কাটে বাবার বাড়ি বরিশাল জেলার আগৈল ঝারার গৈলা গ্রামে। ১৯৩৬ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগমায়া দেবী কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ছিলেন একজন বাঙালি কবি, লেখক ও ঔপন্যাসিক। তার বিখ্যাত আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ন হন্যতে তাকে বিশেষ খ্যাতি এনে দেয়। এই উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৭৬ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। সাহিত্য ছাড়াও সমাজসেবায় অনন্য অবদান রেখেছেন। ১৯৭৭ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৩৪ সালে তিনি ড. মনোমোহন সেনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মনোমোহন সেন ছিলেন একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী। তার সাহিত্যজীবন শুরু ষোল বছর বয়সে। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ উদিত ১৯৩০ সালে প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের ভূমিকা লিখেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ চিত্তছায়া। ১৯৪২ সালে রবীন্দ্রনাথের মংপুতে কাঠানো দিনগুলোর স্মৃতি ও তার সাথে আলাপচারিতা নিয়ে লিখেন স্মৃতিকথা মংপুতে রবীন্দ্রনাথ। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র শতবার্ষিকীতে আমন্ত্রিত হয়ে তিনি বুলগেরিয়া, হাংগেরী ও সোভিয়েত ইউনিয়ন যান৷ সোভিয়েট ইউনিয়ন তাঁকে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী পদকে ভূষিত করে। মৈত্রেয়ী দেবী সোভিয়েট ইউনিয়ন, ইউরোপ ও আমেরিকাতে রবীন্দ্রনাথের ওপরে ও শান্তির সমস্যা বিষয়ক বহু ভাষণ দেন। তিনি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারতে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে বিভিন্ন স্থানে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তিনি অনাথ শিশুদের জন্য 'খেলাঘর' নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এই সংস্থার দেখাশুনা করেন।তিনি ১৯৮৯ সালের ২৯ জানুয়ারী ভারতের কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।