b"তারিণীখুড়োর অভিযান " বইয়ের শুরুর কথা:/bbr তারিণীখুড়ো গল্প বলেন। শ্রোতা পাঁচজন। চাকুরীর কল্যাণে ভদ্রলোক সারা ভারতবর্ষ ঘুরে বেড়িয়েছেন। তাঁর অভিজ্ঞতাও হয়েছে বিচিত্ররকম। গল্পের স্টক খুড়োর অঢেল। বিচিত্র সেই গল্পগুলি। তারিণীখুড়োর মতো আটের খাতিরে যেটুকু কল্পনার আশ্রয় নিতে হয় সেটুকু ছাড়া আর নাকি সবই সত্যি। অবশ্য এই আর্টের খাতিরে কল্পনার আশ্রয় নেবার কথাই বা কে স্বীকার করে। ঘনাদা করেননি, টেনিদাও করেননি।brbr তারিণীখুড়োর শ্রোতাদের সঙ্গে ওঁর রক্তের কোন সম্পর্ক নেই। তিনি ওদের বাবা-কাকাদের দেশের পড়শী সূত্রে খুড়ো, ওদেরও খুড়ো। আসলে খুড়ো নিজেকে বৃদ্ধ ভাবতে আদৌ রাজি নন। ওর শ্রোতাদের মধ্যে ন্যাপালা একবার খুড়োকে দাদু বলে ডেকেছিল। খুড়ো তাতে বেজায় চটেছিলেন। আর চটবেন নাই বা কেন? ওঁর সঙ্গে যখন আমাদের প্রথম পরিচয় হয় তখন তাঁর বয়স চৌষট্টি। কিন্তু আদৌ অথর্ব নন তিনি। ছ’ফিট শরীরটা এই বয়সেও মজবুত। ন্যপলা, ভুলু, চটপটিদের গল্প শেঅনাতে বেনেটোলা লেন থেকে নিয়মিত বালিগঞ্জে আসেন। বাস না পেলে পুরো রাস্তা হেঁটেই পাড়ি দেন।brbr তারিণীখুড়োর মতে ৩৩টি শহরে তিনি ৫৫ বকম কাজ করেছেন। তার সবকটির হদিশ আমরা পাইনি। তবে যা পেয়েছি তাই বা কম কি। করদ রাজ্যগুলির জনাকয়েক রাজার সেক্রেটারী কিম্বা ম্যানেজার, ব্যবসায়ী বা প্রাক্তন অভিনেতার সেক্রেটারী, ম্যাজিশিয়ানের ম্যানেজার, ফিল্ম কোম্পানীর প্রোডাকশন ম্যানেজার। আবার স্বাধীন ব্যবসাতেও তিনি আছেন। কখনো শিল্পীর মডেল, কখনো খবরের কাগজের ফ্রি-ল্যান্স জার্নালিস্ট এমন কি কখনো বা জ্যোতিষিও। স্টেজে এবং স্টেজের বাইরে অভিনয়ও করেছেন তারিণীচরণ বাঁডুজ্জে। ৩৩টা শহরের পুরো হিসেবও নেই আমাদের কাছে। কোলকাতা লক্ষৌ, পুনে, আজমীর, হায়দ্রাবাদ, নাগপুর, ডুমনিপড়, ধুমলগড়, মার্তন্ডপুর, মন্দোর, তারাপুর, ছোটনাগপুরে ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর সেইসব অভিযান কাহিনী। সব জায়গাগুলির হাল-হদিশ হয়তো ম্যাপে পাওয়া যাবে না। কিন্তু তাতে অবিশ্বাস করার কিছু নেই। ভগবানের সৃষ্টিতে ডিফেক্ট থাকে, আর মানুষের তৈরি ম্যাপে ভুল থাকতে পারে না?brbr কেমন মানুষ তারিণীখুড়ো? জীবনে প্রচুর রোজগার করেছেন। কিন্তু সারাক্ষণ টাকার পেছনে আদৌ দৌড়নিন। মাঝে মাঝে রোজগারের ওপর বিতৃষ্ণা এসে গেলে সব ছেড়েছুড়ে স্রেফ ভ্রমণের নেশায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দকে কখনো খুব একটা গুরুত্ব দেননি। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটাই তারিণী বাঁডুজ্জের অভ্যেস। তাঁর নেশা দুটিও খুবই সামান্য। তাঁর নেশা দুটিও খুবই সামান্য। দুধ-চিনি ছাড়া চা আর এক্সপোর্ট কোয়ারিটির বিড়ি।brbr ফেলুদা কিম্বা প্রোফেসর শঙ্কুর প্রথম কাহিনীতে দীর্ঘ সিরিজের কোন আভাষ ছিল না। তারিণীখুড়োর অভিযান শুরু হবার আগেই কিন্তু লেখকের পরিকল্পনায় ছিল একাধিক কাহিনী। খুড়োর এই বিচিত্র অভিযানের সামান্য ইশারা দেবার জন্যেই বর্তমান গ্রন্থ- ‘তারিণীখুড়োর অভিযান’। এই গ্রন্থের অন্যতম আকর্ষণ প্রকাশের সময় সত্যজিৎ রায়ের করা হেডপিসগুলি, যেগুলি গ্রন্থাকারে প্রকাশের সময় ব্যবহৃত হয় নি। বলাই বাহুল্য শ্রী সন্দীপ রায়ের সহযোগিতা বিনা এই কাজে হাত দেওয়া সম্ভব হ’ত না। কৃতজ্ঞ শ্রদ্ধেয়া শ্রীমতী বিজয়া রায়ের কাছেও। এই সঙ্গে আনন্দ পাবলিশার্সের প্রতিও সৌজন্য-স্বীকৃতি জ্ঞাপন করছি।brbr দে. সেbrbr bসূচি/bbr * তারিণীখুড়ো ও ডুমনিগড়ের মানুষখেকোbr * তারিণীখুড়ো ও কনওয়ে কাসলের প্রেতাত্মাbr * তারিণীখুড়ো ও ধুমলগড়ের হাণ্টিং লজbr * তারিণীখুড়ো ও বেতালbr * গণৎকার তারিণীখুড়োbr * নরিস সাহেবের বাংলোbr * তারিণীখুড়ো ও ঐন্দ্রজালিকbr * মহারাজা তারিণীখুড়োbr b"তারিণীখুড়োর অভিযান " বইয়ের শুরুর কথা:/bbr তারিণীখুড়ো গল্প বলেন। শ্রোতা পাঁচজন। চাকুরীর কল্যাণে ভদ্রলোক সারা ভারতবর্ষ ঘুরে বেড়িয়েছেন। তাঁর অভিজ্ঞতাও হয়েছে বিচিত্ররকম। গল্পের স্টক খুড়োর অঢেল। বিচিত্র সেই গল্পগুলি। তারিণীখুড়োর মতো আটের খাতিরে যেটুকু কল্পনার আশ্রয় নিতে হয় সেটুকু ছাড়া আর নাকি সবই সত্যি। অবশ্য এই আর্টের খাতিরে কল্পনার আশ্রয় নেবার কথাই বা কে স্বীকার করে। ঘনাদা করেননি, টেনিদাও করেননি।brbr তারিণীখুড়োর শ্রোতাদের সঙ্গে ওঁর রক্তের কোন সম্পর্ক নেই। তিনি ওদের বাবা-কাকাদের দেশের পড়শী সূত্রে খুড়ো, ওদেরও খুড়ো। আসলে খুড়ো নিজেকে বৃদ্ধ ভাবতে আদৌ রাজি নন। ওর শ্রোতাদের মধ্যে ন্যাপালা একবার খুড়োকে দাদু বলে ডেকেছিল। খুড়ো তাতে বেজায় চটেছিলেন। আর চটবেন নাই বা কেন? ওঁর সঙ্গে যখন আমাদের প্রথম পরিচয় হয় তখন তাঁর বয়স চৌষট্টি। কিন্তু আদৌ অথর্ব নন তিনি। ছ’ফিট শরীরটা এই বয়সেও মজবুত। ন্যপলা, ভুলু, চটপটিদের গল্প শেঅনাতে বেনেটোলা লেন থেকে নিয়মিত বালিগঞ্জে আসেন। বাস না পেলে পুরো রাস্তা হেঁটেই পাড়ি দেন।brbr তারিণীখুড়োর মতে ৩৩টি শহরে তিনি ৫৫ বকম কাজ করেছেন। তার সবকটির হদিশ আমরা পাইনি। তবে যা পেয়েছি তাই বা কম কি। করদ রাজ্যগুলির জনাকয়েক রাজার সেক্রেটারী কিম্বা ম্যানেজার, ব্যবসায়ী বা প্রাক্তন অভিনেতার সেক্রেটারী, ম্যাজিশিয়ানের ম্যানেজার, ফিল্ম কোম্পানীর প্রোডাকশন ম্যানেজার। আবার স্বাধীন ব্যবসাতেও তিনি আছেন। কখনো শিল্পীর মডেল, কখনো খবরের কাগজের ফ্রি-ল্যান্স জার্নালিস্ট এমন কি কখনো বা জ্যোতিষিও। স্টেজে এবং স্টেজের বাইরে অভিনয়ও করেছেন তারিণীচরণ বাঁডুজ্জে। ৩৩টা শহরের পুরো হিসেবও নেই আমাদের কাছে। কোলকাতা লক্ষৌ, পুনে, আজমীর, হায়দ্রাবাদ, নাগপুর, ডুমনিপড়, ধুমলগড়, মার্তন্ডপুর, মন্দোর, তারাপুর, ছোটনাগপুরে ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর সেইসব অভিযান কাহিনী। সব জায়গাগুলির হাল-হদিশ হয়তো ম্যাপে পাওয়া যাবে না। কিন্তু তাতে অবিশ্বাস করার কিছু নেই। ভগবানের সৃষ্টিতে ডিফেক্ট থাকে, আর মানুষের তৈরি ম্যাপে ভুল থাকতে পারে না?brbr কেমন মানুষ তারিণীখুড়ো? জীবনে প্রচুর রোজগার করেছেন। কিন্তু সারাক্ষণ টাকার পেছনে আদৌ দৌড়নিন। মাঝে মাঝে রোজগারের ওপর বিতৃষ্ণা এসে গেলে সব ছেড়েছুড়ে স্রেফ ভ্রমণের নেশায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দকে কখনো খুব একটা গুরুত্ব দেননি। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটাই তারিণী বাঁডুজ্জের অভ্যেস। তাঁর নেশা দুটিও খুবই সামান্য। তাঁর নেশা দুটিও খুবই সামান্য। দুধ-চিনি ছাড়া চা আর এক্সপোর্ট কোয়ারিটির বিড়ি।brbr ফেলুদা কিম্বা প্রোফেসর শঙ্কুর প্রথম কাহিনীতে দীর্ঘ সিরিজের কোন আভাষ ছিল না। তারিণীখুড়োর অভিযান শুরু হবার আগেই কিন্তু লেখকের পরিকল্পনায় ছিল একাধিক কাহিনী। খুড়োর এই বিচিত্র অভিযানের সামান্য ইশারা দেবার জন্যেই বর্তমান গ্রন্থ- ‘তারিণীখুড়োর অভিযান’। এই গ্রন্থের অন্যতম আকর্ষণ প্রকাশের সময় সত্যজিৎ রায়ের করা হেডপিসগুলি, যেগুলি গ্রন্থাকারে প্রকাশের সময় ব্যবহৃত হয় নি। বলাই বাহুল্য শ্রী সন্দীপ রায়ের সহযোগিতা বিনা এই কাজে হাত দেওয়া সম্ভব হ’ত না। কৃতজ্ঞ শ্রদ্ধেয়া শ্রীমতী বিজয়া রায়ের কাছেও। এই সঙ্গে আনন্দ পাবলিশার্সের প্রতিও সৌজন্য-স্বীকৃতি জ্ঞাপন করছি।brbr দে. সেbrbr bসূচি/bbr * তারিণীখুড়ো ও ডুমনিগড়ের মানুষখেকোbr * তারিণীখুড়ো ও কনওয়ে কাসলের প্রেতাত্মাbr * তারিণীখুড়ো ও ধুমলগড়ের হাণ্টিং লজbr * তারিণীখুড়ো ও বেতালbr * গণৎকার তারিণীখুড়োbr * নরিস সাহেবের বাংলোbr * তারিণীখুড়ো ও ঐন্দ্রজালিকbr * মহারাজা তারিণীখুড়োbr
সত্যজিৎ রায় এক বাঙালি কিংবদন্তী, যিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকারের খ্যাতি অর্জন করেছিলেন বিশ্বদরবারে। কর্মজীবনে একইসাথে চিত্রনাট্য রচনা, সঙ্গীত স্বরলিপি রচনা, সম্পাদনা, প্রকাশক, চিত্রকর, গ্রাফিক নকশাবিদ, লেখক ও চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন অসম্ভব গুণী এই মানুষটি। ১৯২১ সালে কলকাতার শিল্প-সাহিত্যচর্চায় খ্যাতনামা এক বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া গ্রামে রয়েছে তাঁর পৈত্রিক ভিটা। ইতালীয় নব্য বাস্তবতাবাদী ছবি ‘লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে’ বা ‘দ্য বাইসাইকেল থিফ’ তাঁকে এতটাই প্রভাবিত করেছিলো যে, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন চলচ্চিত্র নির্মাণের। প্রথম চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালী’র জন্যই পেয়েছিলেন ১১টি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, যার মধ্যে অন্যতম হলো কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া ‘শ্রেষ্ঠ মানব দলিল’ পুরস্কার। তবে তাঁর কাজের সমালোচকও কম ছিলো না। এসব সমালোচনার উত্তরে লেখা দুটি প্রবন্ধ পাওয়া যায় সত্যজিৎ রায় এর বই ‘বিষয় চলচ্চিত্র’-তে। কল্পকাহিনী ধারায় সত্যিজিৎ রায় এর বই সমূহ জয় করেছিলো সব বয়সী পাঠকের মন। তাঁর সৃষ্ট তুখোড় চরিত্র ‘ফেলুদা’, ‘ প্রফেসর শঙ্কু’ এবং ‘তাড়িনী খুড়ো’ যেন আজও জীবন্ত। একের পিঠে দুই, আরো বাড়ো এমন মজার সব শিরোনামে বারোটির সংকলনে লিখেছেন অসংখ্য ছোটগল্প। এছাড়াও সত্যজিৎ রায় এর বই সমগ্র’র মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চলচ্চিত্র বিষয়ক ‘একেই বলে শ্যুটিং’, আত্মজীবনীমূলক ‘যখন ছোট ছিলাম’ এবং ছড়ার বই ‘তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম’। ১৯৯২ সালে মৃত্যুর কিছুদিন আগেই তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘একাডেমি সম্মানসূচক পুরষ্কার' (অস্কার) প্রাপ্তি তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন।