ক্রুসো ১৬৫১ সালের আগস্ট মাসে হালের (Hull) কুইন্স ডক থেকে সমুদ্র যাত্রা শুরু করে। এটি সে করে তার মাতা-পিতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে, তারা চেয়েছিলো যে ক্রুসো কোন পেশায় নিযুক্ত হোক, সম্ভবত আইন পেশা। প্রথম যাত্রায় ঝড়ের কবলে পড়ে তার জাহাজ ধ্বংস হয়, তা সত্ত্বেও তার সমুদ্র যাত্রার আকাঙ্ক্ষা আগের মতই শক্তিশালী থাকে যার ফলশ্রুতিতে সে আবারও সমুদ্র যাত্রা করে। তার এই যাত্রাও দূর্যোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় কারণ তার জাহাজটি স্যালি (Salé) জলদস্যুরা তাদের নিজেদের অধিকারে নিয়ে নেয় এবং ক্রুসো একজন মুরের দাসে পরিণত হয়। দুই বছর পরে ক্রুসো একটি নৌকা নিয়ে জুরি নামের এক বালককে নিয়ে সেখান থেকে পালায়। পর্তূগীজ জাহাজের একজন ক্যাপ্টেন ক্রুসো এবং ঐ বালককে উদ্ধার করেন যে কিনা আফ্রিকার পূর্ব উপকূলের দূরে ছিলেন। ঐ জাহাজটি ব্রাজিল যাচ্ছিলো। ক্যাপ্টেনের সাহায্যে ক্রুসো সেখানে গিয়ে আবাদ করার সুযোগ পায়। কয়েক বছর পরে ক্রুসো আফ্রিকা থেকে দাস আনার জন্য একটি অভিযানে যান কিন্তু পথিমধ্যে ঝড়ের কবলে পরে তাদের জাহাজ বিধ্বস্ত হয় এবং তিনি সমুদ্র থেকে ৪০ মাইল দূরে একটি দ্বীপে আশ্রয় নেন যেটি অরিনোকো নদীর মুখের কাছেই অবস্থিত। ক্রুসো দ্বীপটিকে আইল্যান্ড অফ ডেসপেয়ার (Island of Despair) নামে ডাকেন। ক্রুসোর বর্ণনাকৃত দ্বীপটি সম্ভবত টোবাগোর ক্যারিবিয়ান দ্বীপের উপর ভিত্তি করে বলা, যেহেতু ত্রিনিদাদ থেকে ঐ দ্বীপটি অল্প উত্তরে ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অরিনোকো নদীমুখের কাছে অবস্থিত। সে উত্তর অক্ষাংশ ৯ ডিগ্রী ২২ মিনিট পর্যবেক্ষণ করেন। সে ঐ দ্বীপে পেঙ্গুইন এবং সীল দেখেন। সে ছাড়া বাকী আর তিনটি প্রাণী ঐ দ্বীপে তার সাথে জীবিত রয়েছে- একটি হচ্ছে ক্যাপ্টেনের কুকুর এবং অন্য দুইটি বিড়াল। ক্রুসো তার হতাশাকে জয় করে ভাঙ্গা জাহাজ থেকে অস্ত্র, যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য দরকারি জিনিস নিয়ে আসেন এটি ডুবে যাওয়ার পূর্বে। সে একটি গুহার কাছে বেড়া দিয়ে তার বাসস্থান তৈরি করে। কাঠের ক্রসের উপর চিহ্ন দিয়ে সে ক্যালন্ডার তৈরি করেন। যেসব যন্ত্রপাতি সে জাহাজ থেকে উদ্ধার করেছিলো সেগুলো এবং কিছু সে নিজে লোহাকাঠ দিয়ে তৈরি করেছিলো সেগুলি দিয়ে সে শিকার শুরু করে, বার্লি এবং ধান উৎপাদন করেন, আঙ্গুর থেকে কিসমিস, মাটির জিনিস পত্র তৈরির কৌশল রপ্ত করেন এবং ছাগল পালন করেন। সে একটি তোতা পাখিও পুষেন। সে বাইবেল পড়তে শুরু করে এবং ধার্মিক হয়। সে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেয় সব কিছু পাবার জন্য যদিও সে মানব সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন। আরও কিছু বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরে ক্রুসো স্থানীয় নরখাদকের দেখা পায়, যারা মাঝেমধ্যে এই দ্বীপে আসে বন্দীদের হত্যা করে খাওয়ার জন্য। সে প্রথমে পরিকল্পনা করে যে সে তাদেরকে হত্যা করবে এই ধরনের জঘন্য কাজ করার জন্য। কিন্তু পরে সে বুঝে যে তাদেরকে হত্যা করার কোন অধিকার তার নেই যেহেতু তারা জেনে এই কাজ গুলো করছে না। সে কল্পনা করে যে, একজন অথবা দুইজন বন্দী নরখাদকদের কাছ থেকে উদ্ধার করে তার চাকর বানাতে। যখন সে দেখে যে একজন বন্দী তাদের কাছ থেকে পালিয়েছে, সে ঐ পলায়নকৃত লোককে সাহায্য করে এবং নরখাদকদের কাছ থেকে উদ্ধার করে। ক্রুসো তাকে শুক্রবারে পায় বলে তার নাম রাখে ফ্রাইডে। ক্রুসো তারপর তাকে ইংরেজি শেখায় এবং খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করেন। পরবর্তীতে যখন আরও স্থানীয় নরখাদক তাদের ঐ ভোজ উৎসব করতে আসে তখন ক্রুসো এবং ফ্রাইডে দুইজন মিলে নরখাদকদের বেশিরভাগকে হত্যা করে এবং আরও দুইজন বন্দীকে রক্ষা করে। তাদের একজন ফ্রাইডের বাবা এবং অপরজন একজন স্পেনীয় নাবিক, যিনি ক্রুসোকে জানান যে আরও একটি স্পেনীয় জাহাজ প্রধান ভুমিতে বিধ্বস্ত হয়েছে। তার পর তারা একটি পরিকল্পনা করেন এইভাবে যে, স্পেনীয় নাবিক এবং ক্রুসোর বাবা জাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঐ প্রধানভূমিতে যাবে এবং অন্য যারা আছে তাদের ফেরত এনে একটি জাহাজ তৈরি করে তারা সবাই মিলে স্পেন বন্দরের দিকে রওনা করবে। স্পেনীয়রা (যাদেরকে আনতে যাওয়া হয়েছে) ফিরে আসার পূর্বেই একটি ইংরেজ জাহাজ আবির্ভাব হয়; এই জাহাজের বিদ্রোহীরা ঐ জাহাজটিকে নির্দেশ দিয়ে চাল্লাচ্ছে এবং বিদ্রোহীরা অভিপ্রায় করে যে তারা তাদের ক্যাপ্টেনকে এই দ্বীপে পরিত্যাক্ত অবস্থায় রেখে যাবে ফলে পুরো জাহাজ তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ক্রুসো এবং ঐ ইংরেজ ক্যাপ্টেন তার জাহাজের নিয়ন্ত্রণ তার হাতে ফিরে পাবার জন্য একটি চুক্তি করে। তারপর ক্রুসো, ক্যাপ্টেন এবং ঐ ইংরেজ জাহাজের বিশ্বস্ত নাবিকেরা মিলে জাহাজটি তাদের আয়ত্তে নিয়ে আসেন এবং দুষ্ট ঐ বিদ্রোহীদের দ্বীপে রেখে যায়। ইংল্যান্ডে ফিরে যাবার পূর্বে ক্রুসো বিদ্রোহী নাবিকদের দেখান যে কীভাবে সে একাকী এই দ্বীপে টিকে ছিলো এবং বলে যান যে, আরও লোক এই দ্বীপে আসতে থাকবে। ক্রুসো ১৯শে ডিসেম্বর ১৬৮৬ সালে তার দ্বীপ ত্যাগ করেন এবং ১১ই জুন ১৬৮৭ সালে ইংল্যান্ডে পৌছায়। সে ফিরে এসে জানতে পারে যে তার পরিবার মনে করেছে যে সে মারা গেছে। ফলে তার বাবা উইলে তার জন্য কিছুই রেখে যাননি। ক্রুসো তারপর লিসবনে যান ব্রাজিলে তার এস্টেটের মুনাফা ফিরে পেতে এবং সেখান থেকে সে প্রচুর সম্পদ লাভ করেন। অবশেষে সে তার সম্পদ নিয়ে স্থল পথে আসেন সমুদ্র পরিহার করার জন্য। ফ্রাইডে তার সাথে ছিলো এবং পথিমধ্যে তারা ক্ষুধার্ত নেকড়ের সাথে শেষ একটি দুঃসাহসিক যুদ্ধের সম্মুখীন হয় যখন তারা পায়ারনিস (Pyrenees) পার হচ্ছিলো।