নতুন করে চারদিকে মৌলবাদ মাথা চারা দিচ্ছে। তরুণ সম্প্রদায় হয় মাদক, নয় ধর্মে আকৃষ্ট হয়ে সমাজকে বিপথে চালিত করার উন্মাদনায় মেতেছে। ঘরে ঘরে অশান্তির বীজ। যৌথ পরিবার ভেঙে ছারখার আত্মকেন্দ্রিকতার দাবানলে। আঞ্চলিকতাবাদ গিলে খেতে খেতে চাইছে জাতীয়তাবাদকে। নতুন করে যুদ্ধের দামামা শোনা যাচ্ছে কান পালতেই। রাশিয় ও ইউক্রেন এই দুই দেশই শুধু নয়, হিংসার আগুনে রুটি সেঁকতে ব্যস্ত, আমি, আপনি এবং অনেকেই। সহিংসতার জাঁতাকলে পিষ্ঠ হচ্ছে আমাদের শৈশব, যৌবন এবং অবশ্যই বার্ধক্য। বড় জটিল হয়ে উঠেছে মানব সভ্যতার ভবিষ্যত। মানুষের চিন্তন ও মননে ঘুন ধরেছে। প্রয়োজন চিন্তা ও চেতনার শল্য চিকিতসার। মননের বিকাশ সুস্থ সংস্কৃতির জয়গান ছাড়া সম্ভব নয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম আজও প্রাসঙ্গিক। কিন্তু আরও দৃঢ় ও সহজ ভাষায় আমাদের মগজে আঘাত হানতে হবে। মননের বিকাশে সংগীতের জুড়ি নেই। বিবেকে দোলা দিতে পারে এমন গান বড় জরুরি। সংগীতের ধাবমান প্রবাহ সমানতালে বহমান। ভালো গান আজও হচ্ছে। বিনোদনের রসদে কোনও খামতি নেই। তবু প্রয়োজন, বড় প্রয়োজন অতীতের সৃষ্টিকে সংরক্ষণ। শুধু শিল্পীকেই নয়, তাঁর শিল্প চেতনাকেও ধরে রাখতে হবে আগামী প্রজন্মের জন্য। ভূপেন হাজারিকা একটা চেতনার নাম। হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ ও চেতনায় নজরুলকে নিয়ে বিশ্ব মানবিকতার গান গেয়েছেন তিনি। তিনি ভারতের রত্ন। আরেক রত্ন লতা মঙ্গেস্কর। তিনিও মানুষকে ভালোবাসার পথ দেখিয়েছেন। দুই মহান শিল্পীর সংগীত সাধনার পাশাপাশি বৈচিত্রময় কর্মজীবনের প্রতি আলোকপাত এবং ভবিষ্যতের জন্য তাঁদের স্মৃতি ধরে রাখা প্রজন্মের দায়িত্ব। ভূপেন ও লতাকে নিয়ে প্রচুর কাজ হচ্ছে। শিল্পীর ভ্রাতৃবধূ জয়শ্রী হাজারিকা, বাংলাদেশের শিল্পকলা অ্যাকাডেমির মহা পরিচালক লিয়াকত আলি লাকি, আসামের ব্যতিক্রম সামাজিক সংস্থার কর্ণধার ডঃ সৌমেন ভারতিয়া-সহ অনেকেই ভূপেন হাজারিকার দর্শনকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাইছেন। সময়ের প্রয়োজন। দুই মহান শিল্পীরই অবদান রয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে। দুজনে খুবই জনপ্রিয় পদ্মা ও মেঘনার দুপারে। কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে দুই শিল্পীর সুর ভেসে বেড়াক বাঙালির হৃদয়ে। এই চিন্তা ও ভাবনা থেকেই জন্ম আনন্দ ভৈরবী-র। তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভৈরবী প্রসারিত হোক মানুষের কল্যাণে, এই ভাবনাকেই দুই মলাটে আটকে রাখার প্রয়াস। আনন্দ ভৈরবী।