আজ প্রবারণা পূর্ণিমার রাত। মেঘমুক্ত নির্মল আকাশের বুক চিরে ধীরে ধীরে পূর্বদিগন্তে শান্তির বারতা নিয়ে উদিত হলো চাঁদ। পূর্ণিমার আলো যেন সমগ্র পার্বত্য অঞ্চলকে হৃদয়ে ধারণ করে রেখেছে। জোছনার আলপনা আর শুভ্র চাদরে মোড়ানো অরন্যের অপরূপ শোভায় অভিভূত আমি। পাহাড়ি লোকালয়ে প্রবারণা উৎসবের সাজ সাজ রব। প্রকৃতির মতোই অপরূপ সাজে সজ্জিত পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত পাড়াগুলো। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে খোলা এক চিলতে উঠোন। তাতেই সকাল থেকে আসা বিভিন্ন গোত্রের যুবকেরা টানিয়েছে বিশাল আকৃতির সামিয়ানা। মাটিতে পাতানো হয়েছে মাদুর। চারদিক থেকে পায়ে হেঁটে ছুটে আসছে নারী-পুরুষ কেন্দ্রের দিকে। আগত পুরুষদের তুলনায় নারীদের বেশ বির্মূত এবং প্রাণচঞ্চল দেখাচ্ছিল। সবার পরনে আদিবাসী পোশাক। নারীরা বিভিন্ন প্রকাশ অলংকারে সজ্জিত। পাবর্ত্য নারীদের অলংকারপ্রিয়তার কথা আগে অনেকবার শুনেছি, দেখার তেমন সৌভাগ্য হয়নি। আদিবাসী সমাজে কোনো কোনো গোত্রের নারীদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত অলংকারে ঢেকে রাখার রেওয়াজ আজো প্রচলিত আছে। প্রবারণা উৎসবে যোগ দিতে আসা অধিকাংশ নারীর দেহে হাঁসুলি, চন্দ্রহার, রাজুবন্ধ, তাজ্জ্বব ইত্যাদি ধরনের বিচিত্রস অলংকার দেখলাম। কিছু কিছু পাহাড়ি যুবতি পরিধান করেছে রামছেং, জারকই। চুল বেঁধেছে কেংপ্রলুচুকস, লেমেনকং নামক অলংকার দিয়ে। ত্রিপুরা রমনীগণ সেজেছে রেংকী, বালারাং বাতাং, আলবাতাং নামক অলংকারে। সিন্ধুসভ্যতার আদলে তৈরি কিছু কিছু অলংকার চাকমা রমণীদের দেহে শোভা পাচ্ছিল। চাঁদের তরল জোছনা গলেগলে বৃক্ষের ফাঁক-ফোঁকর ভেদ করে নামছে নিচে। আপন মনে গায়ে মেখে নিচ্ছে সবাই জোছনার লাবণ্য। কেউ কেউ বাঁধভাঙা জোছনার জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে।