কবি নূরুল হকের কবিতা এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা আমরা যখন বিভিন্ন সাহিত্য সম্মেলনে বাংলাদেশে যাই, নূরুলদার আতিথেয়তার কথা কতটুকু আর এখানে প্রকাশ করা যাবে। আমি জানি, কবিতা যখন ঝরনা হয়ে ঝরে পড়ে কিংবা বৃষ্টি ধারায় ধুয়ে দেয় হৃদয়ে জমে থাকা যাবতীয় ক্ষেদ, তখন চোখ বন্ধ করে বলা যায় এ কবিতা—এ বর্ণমালার সুর—এ বসন্তের ফুল যিনি ফোটাচ্ছেন তার নাম নূরুল হক। বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছে তার অসংখ্য অনুরাগী। ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় তার লেখা কবিতা নানা ভাষায় অনুবাদ হচ্ছে। এরপরেও মানুষটি অহংকারহীন। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অনুজদের সামনে এগিয়ে দেন। জাতি ধর্ম ভাষার ভেদাভেদ ভেঙে তিনি মানুষের জয়গান করেন। এমন এক অগ্রজ কবি নূরুল হক যখন তাঁর প্রকাশিতব্য বইয়ের মুখবন্ধ আমায় লিখতে বলেন তখন লজ্জা পেলেও আমি অবাক হইনি। এমন মানুষকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা না জানিয়ে উপায় থাকে না। কবির নতুন কাব্যগ্রন্থের নাম ‘নির্বাচিত সনেট।’ এ যাবৎ লিখিত সবগুলো সনেট থেকে বাছাই করা ১৫০ টি সনেট নিয়ে প্রায় দশ ফর্মার এই বইটির প্রায় প্রতিটি লাইনই নিজের অস্তিত্ব প্রকাশ করার এক মহান উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়। ‘আমার অস্তিত্ব জুড়ে অনিমিখ অবারিত তুমি দোল খায় অনুপম দখিনের দজলা ফোরাত এ আমার জন্ম গ্রাম জলাশয় শ্যামলিম ভূমি উর্বর বাতাসে আমি বেড়ে উঠি শত অহোরাত। পাড়ায় খেলার ছলে আমাদের সহপাঠী যারা বৃষ্টিকে মুঠোয় পুরে মাঠে আর খোলা ময়দানে খেলেছি কতক খেলা। জোছনায় আকাশের তারা হেসে হতো কুটি কুটি আমাদের কৈশোর উত্থানে।’ এখানেই কবিতা এবং কবির সার্থকতা। কৃষ্ণগহ্বর ভেঙে আলোর বর্ণমালা হাতে শব্দেরা মিছিল করে এগিয়ে চলে সুন্দরের জন্য। ভালো মানুষ এবং কবি সমার্থক শব্দ। অগ্রজ কবি নূরুল হকের নিত্য জীবনযাপনে এই সত্য খুঁজে পাওয়া যায়। বর্তমান কঠিন সময়ে এটাই বড় পাওয়া। তাই এ মুখবন্ধ আসলে কবি নূরুল হকের প্রতি আমার শ্রদ্ধার্ঘ।