পাখির অদ্ভুত সৌন্দর্য মানুষকে টানে, কখনো পাখির মাংসও টানে। ফলে পাখিরা উড়ে যায়, দূরে থাকে মানুষের কাছ থেকে। পাখিরা তো আর বিরামহীন উড়তে পারে না। তাই তার বড় আশ্রয় গাছ। গাছে হলো পাখির বাসা। আর গাছ হলো মানুষের নিকটতর। পাখি আর মানুষের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে গাছ, যেন একটা যোগাযোগ সেতু। এই গাছ ফুল দেয়, ফল দেয়, মানুষকে, পাখিকে। এই গাছকেই ঠোকরায় কাঠঠোকরা, এই গাছকেই কেটে ফেলে মানুষ, জ্বালায়-পোড়ায়, আসবাব বানায়। মেঘ-বৃষ্টি, নদী-সমুদ্রের মতো গাছ-পাখির রয়েছে একটা প্রাকৃতিক সম্পর্ক। এইসব সম্পর্কের নানা বুনন দেখতে পাই নানা দেশের গাছ ও পাখির কবিতায়। ফরিদউদ্দিন আতারের ‘দ্য কনফারেন্স অব দ্য বার্ডস’ শুধু সুফি সাহিত্যেই নয়, পাখি বিষয়ক এক শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ। আবার রিচার্ড বাখের ‘জোনাথন লিভিং স্টোন সিগাল’ শুধু উপন্যাস বা প্রেরণামূলক বই নয়, এ যেন গদ্যে আর কাহিনিতে লেখা এক পদ্যও। পাখি নিয়ে বড় বৈচিত্র্যময় সাহিত্য সাধনা দেখতে পাই বিশ্বসাহিত্যে। এডগার এলান পোর ‘র্যাভেন’ পড়ার পর দাঁড়কাকের দিকে আমাদের নতুন সমীহ চোখে তাকাতে হয়, আবার আধুনিককালে এসে টেড হিউজ লিখে ফেলেন কাককে নিয়ে অনবদ্য সব পদ্য। ময়ূর তো আমাদের বাংলা সাহিত্যে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে বরাবরই। জীবনানন্দ দাশ একাই তার কবিতাসমূহে গাছ-পাখির উৎসব বসিয়ে দেন। তার মতো সংবেদনশীল মন নিয়ে গাছ-পাখির দিকে তাকিয়েছেন এ জগতে খুব কম লোকই। এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বিখ্যাত বৃক্ষটি নিশ্চয়ই ‘নিষিদ্ধ বৃক্ষ’, বাইবেলে কিন্তু এই বৃক্ষকেই জ্ঞানবৃক্ষ বলা হয়েছে। ঈশ্বরের নিষেধ সত্তে¡ও এই গাছের ফল খাওয়ার অপরাধেই আদাম-ইভকে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হতে হয়েছে। কিন্তু কী অপরাধ এই নিষিদ্ধ গাছের? কেন তার ফল খেতে নিষেধ করা হয়েছে? আদতে এই গাছ যে জ্ঞানবৃক্ষও। আমরা বাইবেলেই দেখি এই গাছের ফল খাওয়ার পরই আদাম-ইভের সদাসদ জ্ঞান হয়, অর্থাৎ তাদের ভালো-মন্দ নির্ণয়ের সামর্থ্য তৈরি হয়। নিজেদের তারা পাতা দিয়ে হাত দিয়ে ঢেকে দিতে চায়। কারণ তাদের লজ্জাবোধ তৈরি হয়েছে। যে জ্ঞানবৃক্ষের ফল খেলে মানুষের বিচারবোধ খুলে যায়, যে মানুষ চোখ বুজে আর আদেশ মানে না, সে মানুষের তো স্বর্গে থাকার অধিকারও নেই, মহাপ্রভুর অনুকম্পাও আর থাকে না তার প্রতি। জ্ঞানবৃক্ষের কথা যেমন জানি তেমনি তো জানি বিষবৃক্ষের কথাও। উইলিয়াম বø্যাক যেমন লেখেন বিষবৃক্ষের কথা তেমনি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়াও লেখেন বিষবৃক্ষের কথা। আমাদের চর্যাপদকারী লুইপা তো মানুষের শরীরের সঙ্গে বৃক্ষকেই তুলনা করে: ‘কা আ তরুবর পঞ্চবি ডাল’ (মানুষের দেহ একটি গাছ তার পাঁচটি ডাল)। গাছ আর পাখির বয়ান সকল ধর্মগ্রন্থে যেমন পাই তেমনি পাই ইট-পাথর-লোহার নাগরিক কবিদের কবিতাতেও। এই বইতে মূলত সমকালের বিদেশি কবিদের গাছ ও পাখি বিষয়ক কবিতাকেই তুলে ধরা হয়েছে। কবিতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রথমেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বৈচিত্র্যকে। বিশ্ব কবিতার বৈচিত্র্যময় জগতে ভ্রমণের একটা সুযোগ রয়েছে এই কবিতার সংক্ষিপ্ত সংকলনের সুবাদে। মুম রহমান প্রকল্প পরিচালক, ক্রিয়েটিভ ঢাকা
মুম রহমান। পুরাে নাম মুহম্মদ মজিবুর রহমান। জন্ম ২৭ মার্চ, ১৯৭১ সাল। বাবা : মাে. মুসলেহ উদ্দিন। মা : তাহেরুন্নেসা। দেশে এবং দেশের বাইরে উল্লেখযােগ্য পত্র-পত্রিকায় অসংখ্য গল্প-উপন্যাস-নাটক-প্রবন্ধ-অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি ব্যস্ত টিভি নাটক আর বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্ট নিয়ে। প্রথম রচিত ও অভিনীত টিভি নাটক এক চিলতে আকাশ ১৯৮৮ সালে বিটিভিতে প্রচারিত । কাজ করেছেন মঞ্চ ও বেতারে। নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ থেকে নাট্য রচনায় এমএ । পত্র-পত্রিকা ও বিজ্ঞাপনী সংস্থায়ও কর্মরত ছিলেন । বর্তমানে ইংরেজি মাধ্যমের এক স্কুলে নাট্যশিক্ষক হিসাবে কর্মরত। সাকিরা পারভীনকে নিয়ে তৈরি করেছেন আর্ট জোন নামের সংস্থা; যেখানে নাট্যরচনা, আবৃত্তি, বনসাই তৈরির মতাে বিষয়ে ভিন্ন ধারার প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করেন তিনি।