আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে বহু বিষয়ে গদ্যগ্রন্থ বেরিয়েছে। সেটি দূষণীয় নয়, বরং বেরুনোই উচিত। কিন্তু তার চাইতে বেশি বিষয় এখনও লেখালেখির বাইরে। এই বীরোচিত এবং গৌরবময় জনযুদ্ধের গদ্য লেখার সম্ভাব্য শিরোনাম নির্বাচন করা নিয়েই বড়ো মাপের গবেষণা হতে পারে। আলোচ্য বহু বিষয় গদ্যায়নের বাইরে থাকা সত্ত্বেও এই গদ্য লেখালেখিতে অনেক বিষয়ের পৌনঃপুনিকতা (ওভারল্যাপিং) খুব সহজেই লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্ধ—শতবর্ষপূর্তি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশতবর্ষে এসে এই প্রবণতার প্রাবল্য স্পষ্ট। এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মাহাত্ম্যের তুলনায় যুদ্ধসাহিত্যের গদ্যচর্চা হিসেবে খুব আশানুরূপ সবলতার লক্ষণ কী? বরং বাছাই করে অনালোচিত বিষয়গুলোকে লেখার প্রধান প্রতিপাদ্য করে তার ওপর আলোকসম্পাত ঘটালে, সেটাই হতো প্রয়োজনের অধিক অনুকূল। তাতে করে ইতিহাসেরও সমৃদ্ধি বিস্তৃত হতো। সকল বিষয় নিয়ে সকলেরই লেখার যোগ্যতা—সাপেক্ষ অধিকার অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু তা যদি হয় অল্প বা প্রায়—বিনাশ্রমে কাজ শেষ করার নামান্তর, তাহলে এই প্রবণতার কুফলের কারণে সংশ্লিষ্ট লেখাগুলো অনেক ক্ষেত্রেই নিষ্ফল এবং ক্লিশে হতে বাধ্য। তবে এ ধরনের কাজ করা যে এখন বেশ অসহজসাধ্য এবং অকৃত বলেই কর্তব্য, সেই কথাটিই এখানে সবিনয় অকপটে বলা। কোনো বইয়ের চিরায়ত জীবনদৈর্ঘ্য ও স্থিতিশীলতাও যে প্রধানত এরই ওপর নির্ভরশীল, সেই কথাটি বিবেচনায় রাখা দরকার। অন্যথায় এ জাতীয় গ্রন্থের এই রকমের সংখ্যাব্যাপকতা তার বৈচিত্র্যঘাটতির কাছে ি¤্রয়মাণ হয়ে পড়বে। এমন কি, সেই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাটি ইতোমধ্যেই ঘটে গেছে বা ঘটতে বসেছে কি না সেটা নিশ্চয়ই ভাববার বিষয়। উপযুর্ক্ত সমূহ ধারণাকে ধারণে রেখেই মুক্তিযুদ্ধ : প্রাসঙ্গিক গদ্যর সূচিবিন্যাস করতে প্রয়াস পেয়েছি। সবাই এইসব ধারণা এবং মূল্যায়নের সাথে শতভাগ একমত হবেনই তেমনটি আশা করি না বটে। কিন্তু যুক্তিগুলোকে যে চট্ করে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া যাবে না, সে বিষয়টির বাস্তবতাও শতভাগই। অতএব, পাঠকের মতামত পেলে অনুগৃহীত হব। সকলের মঙ্গল হোক। ধন্যবাদ।