জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতা, বিবৃতি ও ঘোষণার সংকলন ‘বাঙালির কণ্ঠ’ বর্তমান প্রজন্মের নিকট মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপনের জন্য এরকম একটি সংকলন দেশের অগ্রগতির স্বার্থে প্রয়োজনীয়। বঙ্গবন্ধুকে অধ্যয়ন করা, তাঁর আদর্শ অনুসরণ করাই প্রকৃত ইতিহাস জানার এবং প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অর্জন করার সঠিক পথ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অর্থ হল-গণতন্ত্র, মানবতাবাদ, অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদ ও শোষণমুক্তি। এই চেতনা ও মূলবোধ বাঙালি জাতির মধ্যে সঞ্চারিত করার জন্যই বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর সমগ্র জীবন, দর্শন, কর্ম ও আচরণ গণতন্ত্র ও মানবতাবাদের মূর্ত প্রতীক। পাকিস্তানী গণবিরোধী স্বৈরাচারী শাসকচক্র শত চেষ্টা করেও বঙ্গবন্ধুকে পথভ্রষ্ট করতে পারেনি। ১৯৪৭ থেকে ’৭১ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা ও ভাষণসমূহের লক্ষ্য ছিল জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনা, জাতীয়তাবোধ এবং শোষণ-বঞ্চনারদ বিরুদ্ধে সাহসের সাথে রুখে দাঁড়াতে শিক্ষা দেওয়া। বঙ্গবন্ধুর সমগ্র জীবন ছিল গণতান্ত্রিক আচরণের সুসম্পূর্ণ দৃষ্টান্তস্বরূপ। সে কারণে তাঁর বক্তৃতা এবং ভাষণসমূহ বাস্তবধর্মী, প্রাণবন্ত এবং কার্যত অনুকরণযোগ্য। গণতন্ত্রের চর্চা করেছিলেন বলেই বঙ্গবন্ধুর জীবনে ও কর্মে এবং ভাষণে-বক্তৃতায় মৌলিকত্ব ছিল। নিঃসন্দেহে তাঁর মৌলিকদ ভাষণসমূহ বিশ্ব গণতান্ত্রিক ধারাকে পুষ্ট করবে। “...যদি এই দেশের মানুষকে খতম করার চেষ্টা করা হয়, বাঙালিরা বুঝেসুঝে কাজ করবেন। প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোল। এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।” -বঙ্গবন্ধু “...if moves are made to exterminate the people of this country, Bangladesh must act with caution. In every village, every neighbourhood. set up Sangram Parishad, under the leadership of the Awami League. And be prepared with whatever you have. Remember; Having mastered the lesson of sacrifice, we shall give more blood, God willing, we shall free the people of this land. The struggle this time is a struggle for our emancipation. The struggle this time is a struggle for independence. Joi Bangla.” -Bangabandhu
মােনায়েম সারকার ১৯৪৫ সালের ৩০ শে মার্চ কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানার ফতেহাবাদ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর রাজনীতিতে হাতে খড়ি স্কুল জীবন থেকে । স্কুল ক্যাপটেন হিসাবে তিনি তখন কার ছাত্র আন্দোলনে জড়িত হয়ে পড়েন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত পদার্থবিদ্যায় ১৯৬৭ সালে কৃতিত্বের সাথে এম.এস.সি, ডিগ্রি লাভ করার পরও বাম রাজনীতির টানেই তিনি সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মরি জীবন বেছে নেন। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ ও বাকশালের রাজনীতিতে উল্লেখযােগ্য অবদান রাখেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যােগদান করেন । বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিতান ও প্রযুক্ত বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও সংস্কৃতি ও সাহিত্যক্ষেত্রেও তার পদচারণা অবারিত। তিনি উদীচীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে থাকেন। তার লেখায় সমসাময়িক চলমান রাজনীতির বিষয়াদি প্রাধান্য পায় । তাঁর রচিত উল্লেখযােগ্য গ্রন্থগুলি হলাে : বাংলাদেশে বিপ্লবী গণতন্ত্রীদের উত্থান অনিবার্য (১৯৮৭), বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্র বিকাশে ঐক্য অপরিহার্য (১৯৯১), ইতিহাসের আলােকে বাঙালি জাতীয়তার বিকাশ ও বঙ্গবন্ধু (১৯৯২), জাতীয় বিকাশের মূলস্রোত বনাম তৃতীয় ধারা (১৯৯২), গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠান বামপন্থীদের করণীয় (১৯৯২), বামপন্থীদের সঙ্কট ও বাংলাদেশের রাজনীতি (১৯৯৩), বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (১৯৯৬), বহতা নদীর মত আওয়ামী লীগ (২০০০), ও এক রাজনৈতিক কর্মীর প্রতিচ্ছবি (২০০৩), যুক্তফ্রন্ট থেকে মহাজোট (২০০৭), জাগাে বাঙালি কানঠে সবায় (২০০৭), রাজনীতির চালচিত্র (২০০৮) তার সম্পাদিত উল্লেখযােগ্য গ্রন্থগুলাে হলাে : রক্তমাখা বুক জুড়ে স্বদেশের ছবি (১৯৮২), ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু (১৯৯৪), মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব (১৯৯৫), জাতীয় চার নেতা স্মারকগ্রন্থ (১৯৯৬), বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস (যৌথভাবে) (১৯৯৭), স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী স্মারকগ্রন্থ (১৯৯৭), শেখ মুজিব একটি লাল গােলাপ (১৯৯৮), বাঙালি বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু (২০০০), বাঙালির কণ্ঠ (২০০১), স্বাধীনতা বিরােধী চক্রের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট ।। চুয়ান্নর অভিজ্ঞতা (৫৪-র নির্বাচনের অপ্রকাশিত দলিল), জেগে ওঠার সময়। এখনই (২০০৭), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জীবন ও রাজনীতি (২০০৮),। মােনায়েম সরকারের নির্বাচিত রাজনৈতিক রচনা (২০০৯) ইত্যাদি। বর্তমানে তিনি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ-এর প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক।