দেশভাগ নিয়ে ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে' সিরিজের চারটি পর্ব। প্রথম পর্ব ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে', দ্বিতীয় পর্ব ‘মানুষের ঘরবাড়ি’, তৃতীয় পর্ব ‘অলৌকিক জলযান’, চতুর্থ পর্ব ‘ঈশ্বরের বাগান'। কিংবদন্তী তুল্য উপন্যাস ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’ সম্পর্কে অগ্রজ সাহিত্যিক বিমল কর লিখেছেন, ‘অতীনের সেরা লেখা, এর মধ্যে অতীনের সত্তা ডুবে আছে, আমরা যাকে বলি ভর পাওয়া লেখা । ‘পুতুলনাচের ইতিকথার পর এতটা আর অভিভূত হইনি'—অশোক মিত্র। ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে এই সময়ের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস'—শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় । ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে এই সময়ের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস’–সমরেশ মজুমদার। সমকালের আর এক বিশিষ্ট সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ লিখেছিলেন—দুই বাংলার সাহিত্যিক ঐতিহ্যের ঐক্যে বিশ্বাসী বলে আমার জানাতে দ্বিধা নেই যে, অতীনের এই রচনা এযাবৎকালের নজিরের বাইরে। ভাবতে গর্ব অনুভব করছি যে, আমার সমকালে এই তাজা তেজস্বী খাঁটি লেখকের আবির্ভাব ঘটেছে। আজ হয়ত তিনি নিঃসঙ্গ যাত্রী। কিন্তু বিশ্বাস করি, একদা আমাদের বংশধরগণ তাঁর নিঃসঙ্গ যন্ত্ৰণা অনুভব করে পিতৃপুরুষদের উদ্দেশে তিরস্কার বর্ষণ করবে। ‘পথের পাঁচালীর' পর এই হচ্ছে দ্বিতীয় উপন্যাস যা বাংলা সাহিত্যের মূল সুরকে অনুসরণ করেছে।' পাঠিকা ঝর্ণা নাগ শিবপুর থেকে লিখেছিলেন—‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে' পড়ে আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। ঈশ্বরের সৃষ্ট সুন্দর পৃথিবী দেখে মুগ্ধ হয়ে যেমন তার সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে কৌতুক বিস্ময় জাগে এও তেমনি।' এমন অজস্র চিঠি এবং সাহিত্যঋণের কথা স্বীকার করা হয়েছে অন্য তিনটি পর্ব ‘মানুষের ঘরবাড়ি’, ‘অলৌকিক জলযান’ এবং ‘ঈশ্বরের বাগান' সম্পর্কেও। বিদগ্ধ এবং গুণী ব্যক্তিরা লিখেছেন, ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে' যদি মহৎ উপন্যাস, ‘অলৌকিক জলযান' তবে মহাকাব্য বিশেষ—আর ‘মানুষের ঘরবাড়ি সোনার কিশোর জীবনের অবিনাশী আখ্যান। শেষ পর্ব ‘ঈশ্বরের বাগান’–এতে আছে দেশভাগ জনিত উদ্বাস্তু পরিবারটির সংগ্রামী বিষয়, অভিনব চরিতমালা এবং পটভূমি সহ জীবনের রোমাঞ্চকর অভিযানের লৌকিক-অলৌকিক উপলব্ধি পুষ্টি খণ্ডিত বঙ্গের অখণ্ড বর্ণমালা ।
জন্ম :১৯৩৪ খ্রীস্টাব্দ। ঢাকা জেলার আড়াই হাজার থানার রাইনাদি গ্রামে। দেশভাগের পর ছিন্নমূল। যাযাবরের মতোই প্রায় কেটেছে যৌবন। কখনও নাবিক রূপে সারা পৃথিবী পর্যটন, কখনও ট্রাক-ক্লিনার। পরে প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা। প্রধান শিক্ষকও ছিলেন একটি স্কুলে। আবারও ঠাঁই বদল। কখনও কারখানার ম্যানেজার, কখনও প্রকাশন-সংস্থার উপদেষ্টা। শেষে সাংবাদিকতা। প্রথম গল্প মফস্বল শহরের ‘অবসর’ পত্রিকায়। ‘সমুদ্রমানুষ’ লিখে পান মানিক-স্মৃতি-পুরস্কার। পরে শিশির পুরস্কার ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরস্কার। উল্লেখযোগ্য উপন্যাস :নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে, অলৌকিক জলযান, মানুষের ঘরবাড়ি, আবাদ, নগ্ন ঈশ্বর, একটি জলের রেখা।