ভূমিকা একটি জাতির বিবর্তন ও বিকাশের ইতিহাসে তার অতীতি ঐতিহ্য অন্বেষণ একটি গুরুত্বপূর্ন দিক। অতীত ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম- এর মাঝে স্বদেশবোধ জাগ্রত হয়। ইতিহাস বিকৃতি ও অবমূল্যায়ন জাতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়। যার পরিণতি খুব মারাত্নক। বিগত দুই দশকে বাংলাদেশে ইতিহাস বিকৃতর ফলে বাঙালীর সংস্কৃত ,আত্নপরিচয় আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। বাঙালীর জাতীয় জীবনের সামগ্রিক অবস্থা সচেতন ও সুনাগরিক মহলহে গভীর ভাবে ভাবিয়ে তুলছে। স্কুল জীবনে আমি সরকারি টেকনিক্যাল বিদ্যালয়ে( বর্তমানে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ) ছাত্র ছিলাম। নবম ও দশম ও শ্রেনিতে এই বিদ্যালয়ে পাঠ্য তালিকায় ইতিহাস ও ভূগোল ছিলনা। উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত পদার্থ বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষালাভের কারণে ইতিহাস বিষয়ের সাথে আমার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ঘটে নি। ছাত্রজীবনে আমি প্রত্যক্ষ ভাবে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত ছিলাম। ছাত্রজীবন শেষে সর্বক্ষনিক রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে রাজনীতি করার সূত্রে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের সান্নিধ্যে আসি। এদেশের সমাজ ও মানুষকে গভীরভাবে প্রত্যক্ষ ও পর্যবেক্ষণ করতে দিয়ে আমার বোধ হয় যে অতীত, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ ও রাজনৈতিক বিকাশের প্রক্রিয়া সঠিক অনুসন্ধান ব্যতীত দেশ ও জাতি সম্পর্কে জনগনের পুরপূর্ণতা অর্জন সম্ভব নয়। এই বাস্তব প্রয়োজন ও পরিস্থিতি আমাকে ইতিহাস শাস্ত্রের প্রতি বিশেষ নজর করে স্বদেশের ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী করে তোলে। দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশের ইতিহাস অধ্যয়ন করতে গিয়ে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত্র সহজ সরল লেখা পাঠক সমাজের জন্য গ্রন্থের অভাব অনুভব করেছি। বাংলাদেশের ইতিহাসের আকর গ্রন্থসমূহের অধিকাংশই ইংরেজী ভাষায় কিংবা উচ্চমার্গীয় বাংলা ভাষায় লেখা। আবার অধিকাংশ গ্রন্থই গবেষনামূলক। বাংলাদেশের আদি পর্ব থেকে র্বতমান পর্যন্ত কোন একক গ্রন্থ নেই বললেই চলে । এই বোধ ও ইতিহাস পাঠের অভিজ্ঞতা থেকে বর্তমান গ্রন্থ রচনর তাগিদ ও প্রয়াস পেয়েছি। এই প্রয়াস আমার অনধিকার চর্চা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই গ্রন্থ কোন গবেষকের জন্য নয়। বাংলাদেশের ইতিহাসের আগ্রহী সাধারণ পাঠক সমাজের জন্য । ইতিহাসের মূলত রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ খুবই সংক্ষিপ্ত ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাই গ্রন্থের নাম করণ করা হয়েছে বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। এই গ্রন্থের মূল অধ্যায় হলো সাতটি। গ্রন্থ শূরু হয়েছে বাংলায় আগত বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে জাতিগত বিকাশ প্রকিয়ার সূচনাপর্ব থেকে। গ্রন্থের পরিসমাপ্তি ঘটেছে আমাদের ইতিহাসের মহত্তম ঘটনা ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তনের ঘটনার মধ্য দিয়ে। সুদীর্ঘ কাল সীমার ভেতরে রয়েছে পুরান পাথরের যুগ নতুন পাথরের যুগ তাম্র-প্রস্তর যুগ।প্রাচীন যুগ অর্থ্যাৎ ঐতিহাসিক যুগের শুরু বাংলায় আর্য -মৌর্যও গুপ্ত শাসনের প্রবর্তন । রয়েছে পাল,সেন, সুলতানী ,পাঠান। মুঘল ও ইংরেজ শাসন আমলে বাংলাদেশের কথা । এই জনপদে বিভিন্ন জাতির আগমনের মধ্য দিয়ে এ দেশের সংস্কৃতি ও জীবনধারা সমৃদ্ধ হয়েছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারের ফলে নতুনকে গ্রহণ ও পুরাতনকে বর্জন করেছে। বস্তুত : বাঙালি সংস্কৃতির মূল বৈশিষ্ট্য হলো সমন্বয়ধর্মী মানবতাবাদী সকল প্রকার গোড়ামী, অন্ধতা, কুসংস্কার বাঙালী সংস্কৃতির পরিপন্থী। অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত পরিসরে রচিত বিধায় এই গ্রন্থে রাজনৈতিক ঘটনাবলী প্রাধাণ্য পেয়েছে। তবে সামাজিক , সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসও প্রসঙ্গান্তরে আলোচিত হয়েছে।গ্রন্থ শেষে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি কালপঞ্জী। এই গ্রন্থ লিখতে গিয়ে যাঁদের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছি তাঁদের মধ্যে সর্বাগ্রে নাম করতে হয়ে বাংলা একাডেমীর উপ-পরিচালক জনাব আশফাক- উল আলমকে। গ্রন্থটি প্রকাশের ব্যাপারে তিনি সার্বিক তত্ত্বাবধান করেছেন।গ্রন্থের তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে সহযোগিতা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ড: নূরুল ইসলাম মঞ্জুর । সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্ত এবং অধ্যাপক আবদুল হালিম এই গ্রন্থ রচনায় আমাকে নানাভাবে উৎসাহিত করেছেন। আগামী প্রকাশনীর মালিক জনাব ওসমান গনি এবং দি প্রিন্টার্স এণ্ড কম্পিউটার -এর স্বত্ত্বাধিকার কাজী হারুন -উর-রশীদ তাঁদের অকৃত্রিম সহযোহিতা হস্ত সম্প্রসারিত না করলে এ বই প্রকাশ করা অসম্ভব হতো না এ কথা আমি নির্দ্বিধায় স্বীকার করছি। তাঁদের প্রতি রইল আমার কৃতজ্ঞতা। মোনয়েম সরকার সূচিপত্র প্রথম অধ্যায়: প্রাগৈতিহাসিক যুগের বাংলা দ্বিতীয় অধ্যায়: বাংলায় পাল এবং সেন বংশের শাসন তৃতীয় অধ্যায়: বাংলায় মুসলিম শাসন চতুর্থ অধ্যায়: মুঘল শাসনামলে বাংলাদেশ পঞ্চম অধ্যায়: বাংলায় ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠা ও উপনেবেশিক যুগের বাংলা ষষ্ঠ অধ্যায়: পাকিস্তানী শাসনাধীন বাংলাদেশ সপ্তম অধ্যায়: স্বাধীনতার ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ * প্রন্থপঞ্জী * বাংলাদেশেল ইতিহাসে কালপঞ্জী
মােনায়েম সারকার ১৯৪৫ সালের ৩০ শে মার্চ কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানার ফতেহাবাদ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর রাজনীতিতে হাতে খড়ি স্কুল জীবন থেকে । স্কুল ক্যাপটেন হিসাবে তিনি তখন কার ছাত্র আন্দোলনে জড়িত হয়ে পড়েন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত পদার্থবিদ্যায় ১৯৬৭ সালে কৃতিত্বের সাথে এম.এস.সি, ডিগ্রি লাভ করার পরও বাম রাজনীতির টানেই তিনি সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মরি জীবন বেছে নেন। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ ও বাকশালের রাজনীতিতে উল্লেখযােগ্য অবদান রাখেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যােগদান করেন । বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিতান ও প্রযুক্ত বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও সংস্কৃতি ও সাহিত্যক্ষেত্রেও তার পদচারণা অবারিত। তিনি উদীচীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে থাকেন। তার লেখায় সমসাময়িক চলমান রাজনীতির বিষয়াদি প্রাধান্য পায় । তাঁর রচিত উল্লেখযােগ্য গ্রন্থগুলি হলাে : বাংলাদেশে বিপ্লবী গণতন্ত্রীদের উত্থান অনিবার্য (১৯৮৭), বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্র বিকাশে ঐক্য অপরিহার্য (১৯৯১), ইতিহাসের আলােকে বাঙালি জাতীয়তার বিকাশ ও বঙ্গবন্ধু (১৯৯২), জাতীয় বিকাশের মূলস্রোত বনাম তৃতীয় ধারা (১৯৯২), গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠান বামপন্থীদের করণীয় (১৯৯২), বামপন্থীদের সঙ্কট ও বাংলাদেশের রাজনীতি (১৯৯৩), বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (১৯৯৬), বহতা নদীর মত আওয়ামী লীগ (২০০০), ও এক রাজনৈতিক কর্মীর প্রতিচ্ছবি (২০০৩), যুক্তফ্রন্ট থেকে মহাজোট (২০০৭), জাগাে বাঙালি কানঠে সবায় (২০০৭), রাজনীতির চালচিত্র (২০০৮) তার সম্পাদিত উল্লেখযােগ্য গ্রন্থগুলাে হলাে : রক্তমাখা বুক জুড়ে স্বদেশের ছবি (১৯৮২), ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু (১৯৯৪), মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব (১৯৯৫), জাতীয় চার নেতা স্মারকগ্রন্থ (১৯৯৬), বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস (যৌথভাবে) (১৯৯৭), স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী স্মারকগ্রন্থ (১৯৯৭), শেখ মুজিব একটি লাল গােলাপ (১৯৯৮), বাঙালি বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু (২০০০), বাঙালির কণ্ঠ (২০০১), স্বাধীনতা বিরােধী চক্রের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট ।। চুয়ান্নর অভিজ্ঞতা (৫৪-র নির্বাচনের অপ্রকাশিত দলিল), জেগে ওঠার সময়। এখনই (২০০৭), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জীবন ও রাজনীতি (২০০৮),। মােনায়েম সরকারের নির্বাচিত রাজনৈতিক রচনা (২০০৯) ইত্যাদি। বর্তমানে তিনি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ-এর প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক।