লেখক-সাধক সব্যসাচী সেনগুপ্তের লেখনীতে আত্মবিশ্লেষণের জ্বলন্ত চিতাবহ্নির স্ফুরণ। দীর্ঘ বৈচিত্রময় জীবনের নানা রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার বর্ণনা, নিপুণ অথচ নিষ্ঠুর লিখনশৈলীতে চিত্রায়িত হয়েছে তাঁর মানুষ দেখার, মানুষকে জানার কাহিনি। যেন মধ্যরাতের শ্মশানে এক মায়াবী নিঠুর জাদুকর তাঁর জীবনের আলখাল্লাটা খুলে দেখাতে চেয়েছিল মানুষের রূপ-রস-গন্ধ মাখানো এক ভয়াবহ ও নির্মম জীবনদর্শনকে। তাঁর মায়াবী স্নেহ-পরশ পেতে জয়ন্তী কাঞ্জিলাল, এক অজানা জীবনের সন্ধানে আসে শ্মশানে। অসহায় সুরসতিয়া, অসফল বৈজ্ঞানিক ঘনশ্যাম বটব্যাল, জ্যোতিষী গণনাথ শাস্ত্রী— যাঁদের খুঁজে পেলেন কুম্ভদর্শনের সময়, সে দৃষ্টি শুধু এক তন্ত্রসাধকের নয়, জীবন দেখার সঙ্গে জীবনযন্ত্রণাকেও দেখেছেন তিনি শ্মশানচারীর নিরাসক্তিতে! প্রেতশিলা, তন্ত্রচর্চার পাশাপাশি কতশত চরিত্র রঙ্গমঞ্চে প্রবেশের মতো এসেছে তাঁর স্মৃতিপটে— নিশি দারোগা, ভুজঙ্গমশাই, মরনী, টিক্লি, শ্মশানপাগলি মধুশ্রী, মুখভর্তি দগদগে অ্যাসিডের ঘা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো কল্যাণী! কিংবা সমুদ্রের মাছমারারা, তাদের করুণ জীবনের সঙ্গে বাঘকে সোয়ামি ভেবে বাঘের থাবায় প্রাণ দেওয়া রাসমণি। অস্থিরচিত্ত অধ্যাপিকা উপাসনা মৈত্রের অন্তঃসলিলা আবেগ, কিংবা সুবিনয় চৌধুরীর মনস্তাপ। তঁার পূর্ব-প্রকাশিত গ্রন্থ ‘অঘোরনাথের তন্ত্রকথা’-র মতোই বৈচিত্রময় পটভূমিতে নানা চরিত্রের সমারোহে এ রচনায়। এ যেন আগুন আর জলের মিশে যাওয়া অনাদি সময়ের জলছবি। যেখানে মানুষই দেবতা— মানুষই মোক্ষ, যে মানুষকে জানার তীব্র আকুতিই ছিল চির শ্মশানচারীর হৃদয়ে।