দি আয়রন ম্যান টেড হিউজের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিশুতোষ উপন্যাস। যুক্তরাজ্যের শ্রেণীকক্ষে এটি অর্ধশত বছরেরও বেশি সময় ধরে পাঠ্য। যুক্তরাষ্ট্রে এটি আয়রন জায়ান্ট শিরোনামে পরিচিত। হলিউডে এই উপন্যাসটির উপর ভিত্তি করে ওয়ারনার বাদার্স একটি চলচ্চিত্র নির্মান করেছে। দি আয়রন ম্যান কারো কারো মতে একটি রূপকথার কাহিনী। কারো কারো মতে এটি একটি সাইয়ান্স ফিকশন। আবার কারো কারো মতে এটি রূপকথা ও সাইয়ান্স ফিকশনের মাঝামাঝি একটি অনবদ্য সাহিত্যকম। টেড হিউজ তাঁর মাতৃহারা দুই শিশুকে ঘুমপাড়ানোর সময় উপন্যাসটি পড়ে শোনাতেন। তিনি মিথ এ্যান্ড এজুকেশন শীর্ষক এক রচনায় বলেছেন মানসিকভাবে রুগ্নদের আরোগ্যদান এবং মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির সঠিক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য তিনি পরিকল্পিতভাবে এই উপন্যাসটি শিশুকিশোরদের উপযোগী করে লিখেছেন। তিনি মনে করতেন, পরিবেশ দূষণ এবং মানুষের আত্মকেন্দ্রিকতা একটি মানসিক সমস্যা। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য নষ্ট মানসিকতার বুড়োদের উপর ভরসা করা যায় না। তারা লোভের ঊর্ধে উঠতে পারে না। প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে শিশুদের আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তোলা গেলে ধরিত্রীকে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। এ বিষয়টি মাথায় রেখে তিনি দি আয়রন ম্যান (১৯৬৮) লিখেছেন এবং এর ধারাবাহিকতায় সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে লিখেছেন দি আয়রন উমান (১৯৯৩)। বই দুটো অনুবাদ করা হয়েছে যথাক্রমে লৌহপুরুষ ও লৌহরমণী শিরোনামে। বই দুটো একই সঙ্গে পাঠ করা হলে পরিবেশ বিষয়ে শিশুকিশোর পাঠক এবং তাদের অভিভাবকবৃন্দের মধ্যে বিশেষ সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। বিশাল আকৃতির লৌহপুরুষ কোত্থেকে এসেছে তা কেউ জানেনা। সে একটি স্থানীয় খামারের ধাতব যন্ত্রপাতি খেতে থাকে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। হোগার্থ নামে এক বুদ্ধিমান বালক লৌহপুরুষকে ফাঁদে ফেলে মাটির গভীর গর্তে পুঁতে ফেলে। কিন্তু একদিন সে মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে। হোগার্থ বুঝতে পারে জোর করে নয়, বন্ধুেত্বর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব। সে মরচে ধরা পরিত্যাক্ত ধাতব টুকরা লৌহপুরুষকে খেতে দেয়। তাতে লৌহপুরুষ সন্তুষ্ট। ধীরে ধীরে লৌহপুরুষের সঙ্গে হোগার্থের বন্ধুত্ব হয়। হঠাৎ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একটা ভীতিকর খবর দিলো। মহাকাশ থেকে ড্রাগনের মতো বিশাল কিছু একটা পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন মহাশূন্য-বাদুড়-দেবতা-ড্রাগন। কিছুদিনের মধ্যে ড্রাগনটি অস্ট্রেলিয়ার উপর পড়ে। তাতে প্রায় সমগ্র অস্ট্রেলিয়া ঢাকা পড়ে। দেশ জুড়ে জরুরি মানবিক সাহয্যের প্রয়োজন দেখা দেয়। পৃথিবীর মানুষ একজোট হয়ে এই ড্রাগনটিকে ধ্বংস করার জন্য সামরিক অস্ত্রসহ সৈন্যবাহিনী পাঠায়। কিন্তু গোলাবারুদের আঘাত তার দেহে একটি ক্ষতও সৃষ্টি করতে পারে না। লৌহপুরুষ পৃথিবীর এই বিপদের খবর শুনে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেহ থেকে বিযুক্ত করে নেয় যাতে সহজে তাকে অস্ট্রেলিয়ায় চালান করা যায়। লৌহপুরুষ সেখানে পৌঁছে ড্রাগনকে শক্তি প্রদর্শনের দ্বন্দ্বে আহ্বান জানায়। বিশেষ ধরনের প্রতিযোগিতায় ড্রাগন হার মানে। ড্রাগনটি জানালো শান্তির সঙ্গীত গেয়ে মহাবিশ্বের ভারসাম্য বজায় রাখা তার কাজ। মানবজাতির ভয়ংকর হট্টগোল ও যুদ্ধবিগ্রহের শব্দ শুনে সে এসেছে। লৌহপুরুষ তাকে আদেশ করলো পৃথিবীর মানুষের জন্যও যেন সে শান্তির সঙ্গীত গায়। ড্রাগনটি সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর মানুষের জন্য তার যাদুকরী সঙ্গীত ধরে। সঙ্গীতের প্রভাবে মানুষ আত্মকেন্দ্রিকতা এবং যুদ্ধংদেহী মনোভাব থেকে মুক্ত হয় - পৃথিবীতে প্রথম বারের মতো শুরু হয় শান্তিপূর্ণ বসবাস।