১৮৮৭ খৃষ্টাব্দের ৩০ অক্টোবর কলকাতায় সুকুমার রায়ের জন্ম। পিতা উপেন্দ্রকিশোর এবং মাতা বিধুমুখী দেবীর প্রথম পুত্র। তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় ও তাঁর উপরে ছিলেন দিদি সুখলতা। ১৯১৪ সালে সুকুমার রায়ের প্রথম যে লেখাটি সন্দেশ পত্রিকাতে প্রকাশিত হয় তার নাম 'খিচুড়ি'। এর পর কাঠবুড়ো, ছায়াবাজি, গোঁফচুরি, বিজ্ঞান শিক্ষা, খুড়োর কল প্রভৃতি একে একে বের হতে থাকে। ১৯১৫ সালে পিতা উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যু হলে 'সন্দেশ' পত্রিকার সম্পাদনার ভার বর্তায় সুকুমার রায়ের উপর। ১৯১৫ থেকে ১৯২৩: এই আট বছর তিনি এই পত্রিকাটির সম্পাদনা করে শিশু সাহিত্যের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেন। একই সাথে সানডে ক্লাব নামেও একটি সাহিত্য সভার প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। রোগশয্যাতেই কাটে তাঁর জীবনের শেষ আড়াই বছর। সেই অবস্থাতেই তিনি শুয়ে শুয়েই এমন অনেক লেখা এবং ছবি আঁকার কাজ শেষ করেন যেগুলোকে নির্দ্বিধায় তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি বলে স্বীকার করে নেওয়া যেতে পারে। জীবদ্দশায় তিনি তাঁর কোন রচনাকে পুস্তকাকারে দেখে যেতে পারেননি। যদিও পত্র-পত্রিকায় তাঁর বহু লেখাই ছাপা হয়েছিল। ২০ সেপ্টেম্বর ১৯২৩-এ তাঁর প্রথম বই 'আবোলতাবোল' প্রকাশিত হয় তাঁর মৃত্যুর ৯ দিন পর। এই বইয়ের যাবতীয় অলঙ্করণ ও প্রচ্ছদ তিনি রোগশয্যাতে শুয়েই শেষ করে গিয়েছিলেন। বাংলা সাহিত্যে অদ্বিতীয় শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায় ১৯২৩ খৃষ্টাব্দে পরলোক গমন করেন।
উপেন্দ্ৰকিশোর রায়ের জ্যেষ্ঠ পুত্ৰ সুকুমারের জন্ম ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে। ১৯০৬-এ পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন দুই বিষয়েই অনার্স নিয়ে বি.এসসি পাশ করার পর ১৯১১-য় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গুরুপ্ৰসন্ন ঘোষ বৃত্তি লাভ করে মুদ্রণ বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য তিনি বিলেতে যান। লন্ডনে ও ম্যাঞ্চেস্টারে অধ্যয়ন করেন তিনি ও তাঁর গবেষণার জন্য সম্মানিত হন। ১৯১৩-য় উপেন্দ্ৰকিশোরের সম্পাদনায় ছোটদের সচিত্ৰ মাসিক পত্রিকা সন্দেশ’’ প্রকাশিত হয়। সুকুমার দেশে ফেরারী কিছুকাল পরে ১৯১৫-য় উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যু হয়। সুকুমার ইউ রায় অ্যান্ড সন্স কার্যালয়ের পরিচালনার এবং “সন্দেশ’ সম্পাদনার দায়িত্ব গ্ৰহণ করেন। “সন্দেশ’-এর পাতাতেই তাঁর অধিকাংশ ছোটদের লেখা-গল্প, কবিতা, প্ৰবন্ধ, ধাঁধা ইত্যাদি প্রকাশিত হয়েছে। শুধু নিজের লেখা নয়, ছবি এঁকেছেন তিনি। “হ য ব র ল’, ‘আবোল তাবোল’ জাতীয় আজগুবি চালের বেঠিক বেতাল ভুলের ভবের গদ্য ও পদ্য রচনা ছাড়াও শিল্প সাহিত্য ভাষা ধর্ম বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিষয়ক গভীর ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও সক্রিয় ছিল তাঁর লেখনী। আড়াই বছর কালাজ্বরে ভুগে ১৯২৩-এ মাত্র ৩৬ বছর বয়সে সুকুমার রায় ১০০ গড়পার রোডের বাড়িতে পরলোকগমন করেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগেও তিনি শুয়ে শুয়ে সন্দেশের জন্য ছবি এঁকেছেন, প্রচ্ছদ রচনা করেছেন, গল্প কবিতা লিখেছেন। আবোল তাবোল’-এর ডামি কপিাটাও রোগশয্যায় তৈরি করেছেন। কিন্তু বইটি ছেপে বেরোবার ন” দিন আগে তাঁর মৃত্যু হয়।