ইদুল আজহা ও কুরবানি আমাদের জীবনে মহান বার্তা বয়ে আনে। ত্যাগ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি তালাশ সবকিছুর উর্ধ্বে, এই শিক্ষার স্মরণিকা হিসেবে মুমিনের জীবনে প্রতি বছর এই ইবাদতের আগমন ঘটে। তাই ইবাদত হিসেবে এর বিশুদ্ধতা বজায় রাখা আমাদের কর্তব্য। এই ইবাদতের মাহাত্ম্য, গুরুত্ব এবং সঠিক পদ্ধতি জানা আমাদের জন্য আবশ্যক। তাই এ বিষয়ক ইলম শেখার দায়িত্ব পালন, বিশেষত কুরবানি সংশ্লিষ্ট ইবাদতের সময় ঘনিয়ে আসায় মুফতি তাকি উসমানী হাফি. এবং মুফতি মুহাম্মাদ সালমান মনসুরপুরী হাফি.-এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু লেখার অনুবাদ নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘ফাজায়েল ও মাসায়েল : কুরবানি ও আকিকা’ বইটি। আকিকাও আমাদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। নবজাতকদের হক। যেহেতু এখানেও পশু জবাইয়ের বিষয় রয়েছে, সুতরাং কুরবানির সাথে আকিকার আলোচনা চলে আসাও খুবই প্রাসঙ্গিক। সার্বিক দিক সামনে রেখে সঞ্জীবন প্রকাশন সাইদুর রহমান জালালপুরী হাফি. এবং আবু মিদফা মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.-এর চমৎকার কলমে অনুবাদকর্মটি প্রকাশ করতে যাচ্ছে। উদাহরণত বইটির বিষয়সূচিতে পাচ্ছেন : কুরবানি, হজ ও জিলহজের ১০ রাত, উক্ত রাতগুলোর ফজিলত, এই দিনগুলোর বিশেষ আমল, কুরবানির সময় ও বিবিধ, , কুরবানি কার ওপর ওয়াজিব এবং কেন সহ এ জাতীয় অনেক জিজ্ঞাসার জবাব, ত্রুটিযুক্ত প্রাণীর বিভিন্ন ধরন ও সেসবের মাঝে কোনটি কুরবানির উপযুক্ত আর কোনটি উপযুক্ত নয়, কুরবানিতে জবাইয়ের আদব ও অবশ্যই জানা উচিত ধরনের বিভিন্ন মাসয়ালা, এবং শেষ অধ্যায়ে আকিকার বিস্তারিত আলোচনা। মাত্র ৯৫ পৃষ্ঠার ছোট্ট কলেবরের বইটি হতে পারে আপনার একবসায় কুরবানির ইবাদত শেখার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী শুধু ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে বই রচনা করেননি, তিনি একাধারে ইসলামি ফিকহ, হাদীস, তাসাউফ ও ইসলামি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। আর তা-ই নয়, তিনি একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতে, এমনকি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চেরও বিচারক পদে আসীন ছিলেন। মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে ১৯৪৩ সালের ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হলে তার পরিবার পাকিস্তানে চলে আসে এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ইসলামি নানা বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেখান থেকে অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। আর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি। দারুল উলুম করাচি থেকে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়ার উপর। সর্বোচ্চ স্তরের দাওয়া হাদিসের শিক্ষাও তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি বিষয়, যেমন- ফিকহ, ইসলামি অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্যপদ রয়েছে তাঁর। পাকিস্তানে 'মিজান ব্যাংক' নামক ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে ইসলামি অর্থনীতির প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বইও। তকী উসমানীর বই এর সংখ্যা ৬০ এর অধিক। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমূহ রচিত হয়েছে ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায়। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'Easy Good Deeds', 'Spiritual Discourses', 'What is Christianity?', 'Radiant Prayers' ইত্যাদি ইংরেজি বই, ও 'তাবসেরে', 'দুনিয়া মেরে আগে', 'আসান নেকিয়া' ইত্যাদি উর্দু বই উল্লেখযোগ্য। এসকল বই ইসলাম প্রসারে, এবং বিভিন্ন ইসলামি ব্যাখ্যা প্রদান ও আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।