ধ্যান থেকে ঝাণ। ঝাণ থেকে ঝেন। ঝেন থেকে জেন। জেন প্রাচীন ভারত থেকে চীনে জাপানে গিয়েছে। জেন যোগসাধনা ও বৌদ্ধধর্ম থেকে এসেছে। এ মতবাদ শেষ পর্যন্ত সব তত্ত্ব ও মনন পার হয়ে যায়, সত্য বোধ আর বোধিদৃষ্টির কথা বলে। হঠাৎ জাগিয়ে তোলা এর লক্ষ্য। যদি কোনো জেন সাধককে প্রশ্ন করা হয় 'জেন কী', তার উত্তরে তিনি হয়তো চুপ ক'রে থাকবেন। এই মৌনই জেন। বুদ্ধ একবার ধর্মদেশনার সময় শ্রাবকদের কিছু না ব'লে সদ্য উপহার-পাওয়া একটা ফুলের তোড়া সামনে উঁচুতে তুলে ধরেছিলেন শুধু এই ছিল তাঁর সেবারের উপদেশ। জেন কী এ প্রশ্নের উত্তরে আরেক জেন সাধক শিষ্যদের দিকে এগিয়ে গিয়ে দুহাত ছড়িয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এই বিস্তারই জেন। আসলে গাছের পাতার তুলনায় মুঠোর পাতা যেমন কম সেরকম অনুভূত জেনের তুলনায় জেনের প্রকাশ কম। না-বলা বাণীর ঘন অন্ধকারে জেনবাদ তারার মতন, অনেক আগে শেষ হয়ে যাওয়া কোনো তারার আলো যেন অনেক আলোকবর্ষ পার হয়ে পৃথিবীতে এখনই এসে পৌঁছল। একবার স্বর্গ থেকে পুষ্পবৃষ্টি হলো, দেবতারা জেন সাধকের প্রশংসা করলেন। সাধক বললেন: প্রশংসা কেন, আমি তো কিছু বলি নি। দেবতারা বললেন: আপনি কিছু বলেন নি, আমরাও কিছু শুনি নি। জেন এই। এই জেন। ধ্যান থেকে যদি জেন হয় তবু জেনবাদ মানে শুধু আসনপিঁড়ি হয়ে নাকের ডগায় চোখ রেখে বসে থাকা নয়। জেনমঠে ঘড়ির কাঁটা ধ'রে সারাক্ষণ কাজকর্ম চলছে চলবে। ধ্যানের ভান করে সেখানে পেটের মধ্যে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকার কোনো উপায় নেই, তেমন করলে পিঠে গুরুর লাঠির ঘা এসে পড়বে। জেনবাদের নৈষ্কর্য্য নিষ্কর্মাদের জন্য নয়, তা পরিশ্রমের ভিন্ন নাম। প্রশান্তির নাম ক'রে সেখানে ঘুমিয়ে পড়া নিষেধ। জেনবাদ নিজেকে আঘাতে আঘাতে বেদনায় জাগিয়ে তোলার জন্য। অন্যকে আরো চেতনায় আরো বেদনায় জাগিয়ে তোলার জন্য। না ধূপ না দীপ না মন্ত্র না নৈবেদ্য জেন সাধকের কিছু লাগে না জেনের কোনো আশ্রয় নেই। জেন কারো নির্ভর চায় না। জেনবাদী জানেন: টোকা নয়, ধাক্কা দিলেই আচমকা দরজা খোলে। তোরণ-নেই, এমন এক তোরণ সহসা উন্মুক্ত হয়ে যায়। তিনি জেনবাদকে বুদ্ধহৃদয় বলেন, তাঁর প্রিয়তম পুঁথি লঙ্কাবতারসূত্র।