বিপুল এই মহাবিশ্বে আমাদের পৃথিবী অতিক্ষুদ্র ও নগণ্য এক গ্রহ। স্যার এডিংটনের হিসাবে গড়ে প্রতি গ্যালাক্সিতে দশ সহস্র কোটি নক্ষত্র আছে এবং মহাবিশ্বে এমন নক্ষত্রের সংখ্যা আবার দশ সহস্র কোটি। সম্ভাবনার নিয়মে যে বিপুলসংখ্যক গ্রহ মহাবিশ্বে থাকার কথা তা লিখে প্রকাশ করলে ১-এর পর বাইশ বা তেইশটি শূন্য বসাতে হবে। কিন্তু সবকিছুর পরও পৃথিবী আমাদের আবাসস্থল। একমাত্র এখানেই জীবনের উদ্ভব ও বিকাশ প্রত্যক্ষ করা গেছে। অনেক গ্রহের সঙ্গে নানাদিক থেকে মিল থাকলেও পৃথিবী তাই ভিন্ন ও অনন্য। পাহাড়, সমুদ্র, নদী, হ্রদ, মালভূমি, জলপ্রপাত, মরুভূমি, আগ্নেয়গিরি, বন ও শস্যক্ষেত্র সব মিলে অপরূপ ও বৈচিত্র্যময় আমাদের এই পৃথিবী। এখানে ঘটছে নানা ঘটনা। ভূমিকম্প, জলোচ্ছ¡াস, ঘূর্ণিঝড়, সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের পাড় ভেঙে পড়া, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রার ওঠানামা দীর্ঘদিন ধরে বদলে দিচ্ছে পৃথবীর রূপ। মহাকর্ষ বল, চৌম্বকক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয়তা, সৌর বিকিরণ সবই প্রভাব রাখছে পৃথিবীর ওপরে। পৃথিবী আমাদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ এখানেই একমাত্র জীবনের উদ্ভব ও বিকাশের প্রমাণ মিলেছে। বিপুল মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমরা জানছি ও ভাবতে পারছি পৃথিবীতে বসেই। পৃথিবী এর অনন্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে জীবন সম্ভব না করলে আমাদের উদ্ভব ঘটত না এবং মহাবিশ্বের রহস্য থাকত অনুদ্ঘাটিত। পৃথিবীকে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে জানার পিছনে আরও একটি গভীর লক্ষ্য আমরা দেখতে পাই। আর কোথাও জীবন আছে কি? এই মহাবিশ্বে আমরা কি নিঃসঙ্গ? এ প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে জীবনের উদ্ভব ও বিকাশের পূর্বশর্তগুলো জানতে হবে। পৃথিবীকে সূ² ও গভীরভাবে জানার ভিতর দিয়ে এই শর্তগুলো বিশ্লেষণ ও যাচাই করতে পারি। পৃথিবীর শিলামÐল, বারিমÐল ও বায়ুমÐল এদের বৈচিত্র্য ও জটিল গঠন নিয়ে যে ভৌত ও জৈব পরিবেশ তৈরি করেছে সেখানে আমরা পেয়েছি অনুকূল তাপমাত্রা, বাতাসের সঠিক ঘনত্ব, যা সৌর বিকিরণের অনুপ্রবেশ, রাসায়নিক বিক্রিয়া ও শক্তির আদান-প্রদান ঘটাতে সক্ষম। পৃথিবী আমাদের শুধু আবাসস্থল নয়; এর অপার সৌন্দর্য, বৈচিত্র্য ও অনন্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে আকর্ষণীয় এক পরীক্ষাগার আমাদের অনুসন্ধিৎসা মিটাবার।