বৈরাগীর ছোট বউ বৈরাগীকে বেসামাল সুখে রাখে। তবু সাগরের ঢেউ দেখার অভ্যেস বৈরাগীর গেল না। সাগরের ঢেউ অহর্নিশি দেখতে গিয়ে ওর দু’দুটো বউ হাতছাড়া হয়ে গেছে। ছোট বউ মনে হয় ফিক্সড হয়ে গেল। বৈরাগীর ঘরে এখন শাওন নামের চার বছরের সন্তান ওর ভিন্ন ভাবনায় ফুলস্টপ টেনে দেয়। বৈরাগী ছাত্র বয়সে বেশ মেধাবী ছিল। সেই মেধা কাজে লাগিয়েছে যুবক-যুবতিদের পেছনে পেছনে ঘুরে। তাদের কাজ-কারবার, হাবভাব অনুযায়ী দুই হাত এক করে দিয়েছে। দিনে দিনে বৈরাগীর হাতে একতারার বদলে এসেছে মিষ্টির প্যাকেট, খামে মোড়ানো টাকা আর নতুন শার্ট, প্যান্ট, লুঙ্গি। বৈরাগী এখন ঘটক মশাই নামে বেশি পরিচিত। ঘুম থেকে উঠে বৈরাগীর মুখ দেখলে মানুষের মন ভালো হয়ে যায়। এলাকায় একমাত্র বৈরাগী গলা ছেড়ে গান গায় যখন তখন। ওর গানে মুগ্ধ হয়ে কেউ কেউ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। বৈরাগী তাকায় আকাশ, নদী আর প্রকৃতির দিকে। আর ওর মন কেমন করে। সেই মন কেমন করা মুহূর্তে ওর সামনে ধপাস করে এসে বসে বিজলি। বলে- ওই বেরসিক ঘটক, তোমার চোখ নেই? আছে তো! তাহলে আমার বিয়ে দ্যাও না ক্যান? মাত্র তো ক্লাস টেনে পড়িস মা। পড়াশোনা কর। বড় হ। পাত্র তো হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে না। পাত্র হাতছাড়া হতে বাকি কই? সে তো শুধু উড়াল দিতে চায়। আচ্ছা, আমি তো আছি। এত চিন্তার কী? বিজলি বৈরাগীর দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। বৈরাগীর হাতে গুঁজে দেয় ডাসা পেয়ারা। বলে- নদীর ধারে বসে পেয়ারা খাও ঘটক। আর আমার কথা ভাবো। বৈরাগীর এখন বিজলির কথা ভাবার সময় নেই। সুপ্রসাদ বাবু ওকে ডেকে পাঠিয়েছেন। কী জানি কী কাজে। সুপ্রসাদ বাবুর জুয়েলারিতে বৈরাগী একদিন ওর ছেলে শাওনকে বেড়াতে আনবে। শাওনের বড় শখ সত্যি সত্যি হীরের গহনা দেখার।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় কবি ও কথাসাহিত্যিক। শৈশব থেকেই লিখছেন। নারী ও প্রকৃতি তার প্রিয় বিষয়। দেশের সকল জাতীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন গল্প, কবিতা বা উপন্যাস। শিশুসাহিত্যেও তিনি সমান পারদর্শী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (অনার্স) এবং এমএ (ইতিহাস) করেছেন। কর্মজীবনে সাংবাদিকতা, অধ্যাপনা, এনজিও কর্মকর্তা হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। বর্তমানে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। চঞ্চল শাহরিয়ার-এর প্রকাশিত বই এর সংখ্যা ১৬। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য পেয়েছেন মিতালী সংসদ পুরস্কার (১৯৯৭), কোটচাদপুর প্রেস ক্লাব পুরস্কার (১৯৯৯), খুলনা। মােহনা সাহিত্য পুরস্কার (২০০৩) এবং মৌচাকে ঢিল সম্মাননা (২০১০)। বাংলা একাডেমির সদস্য চঞ্চল শাহরিয়ার-এর জন্ম ৯ মার্চ ১৯৬৬।