বাঙালি, বাঙলা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে স্বকীয় জাতি ধারণায় আর কেউ এভাবে বাঙালি জাতিকে মুক্তি ও স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করতে পারেনি। তাঁর মহান নেতৃত্বে বাঙালি জাতি সুদীর্ঘকালের গোলামির বন্ধন ছিন্ন করে, আত্মপ্রকাশ ঘটে জাতি, রাষ্ট্র বাংলাদেশের। তিনি স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও বাঙালি জাতির জনক। পঞ্চাশের দশকে পূর্ববঙ্গে অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশে বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে পুনর্জাগরণ সৃষ্টি হয়, বঙ্গবন্ধু ছিলেন তাঁর অগ্রণী পুরুষ। একই সমান্তরালে শিল্প -সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় তিনি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও অনুষঙ্গে পরিণত হন। মুক্তিযুদ্ধের কথাসাহিত্য ও উপন্যাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে ওঠেন অনিবার্য চরিত্র। অনেকে তাঁকে কেন্দ্রে রেখে উপন্যাসের কাঠামো নির্মাণ করেছেন। অনেকের উপন্যাসে তিনি শুধু অনুষঙ্গ হিসেবে আসলেও শেষ পর্যন্ত তিনিই গল্প কাঠামোর মূল নিয়ন্ত্রক চরিত্র হয়ে ওঠেন। শুধু বাঙালি নয়, অনেক বিদেশি লেখক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উপন্যাসে ক্যারেক্টার করেছেন। আবার দেশ বিদেশে তাঁকে নিয়ে ষড়যন্ত্রও কম ছিল না। ইতিহাসের কালো পর্দা, ষড়যন্ত্র, মিথ্যাচার, অর্ধ সত্য, ইতিহাস বিকৃতি ও তথ্য বিকৃতি জাল ছিন্ন করে সত্য উদঘাটিত হবে; উপন্যাসিকের ভূমিকা সেখানে গৌন নয়। বঙ্গবন্ধু মুজিবের মহিরুহসম ব্যক্তিত্ব, তাঁর ঔদার্য, জনমানসে তাঁর প্রভাবের শৈল্পিক ছায়া কথাসাহিত্যিকগণ ভাষা-বর্ণনা, ভাষা-ছবি ও চিত্রকল্প-ইমেজে মূর্ত করেন। ঐন্দ্রজালিক ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ছায়া প্রতিরূপের নানান ভঙ্গি ভাষার আচরে জীবন্ত হয়ে ওঠে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে উপন্যাসে বঙ্গবন্ধুর পাঠ, পঠন ও পর্যালোচনা প্রয়োজন। বাংলাদেশের উপন্যাসিকগণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভিন্ন ভিন্ন অর্থভেদে মূল্যায়ন করেন। মূল্যায়ন বাস্তবতা ও নিরেট ভিতের উপরে দাঁড়িয়ে শৈল্পিক হয়ে ওঠে। পাঠকের উপলব্ধি নানা স্তরে ব্যাপ্ত হয়। একইসঙ্গে শিল্পের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাস্তব জীবনের ইতিহাস ও তথ্য বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। এই বোধ থেকে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা ও আমার দেখা নয়া চীন পর্যালোচনা করা হলো। গ্র›হটিতে লেখক সোহেল মাজহার ইতিহাস, বাস্তবতা ও শিল্প ধারণার প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নানা মাত্রার শৈল্পিক বিশ্লেষণ ব্যক্ত করেছেন।