একুশের অর্ধশতাব্দী কালেরও অধিক কাল পেরিয়ে যাবার পর এর পটভূমি নিয়ে আমার গল্পের আয়োজন। দূর অতীতের সঙ্গে এই শিল্প-সংযোগ ঘটার পেছনে কাজ করেছে একটি জিজ্ঞাসা। একুশের মতো এমন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কেনো এত কম কথাসাহিত্য সৃষ্টি হলো? বুঝতে পারি এর গল্পাংশের পরিধি খুবই সীমিত। গল্প হতে গেলে কাহিনীর যে উপাদান আবশ্যক একুশে তার সন্ধান পাওয়া জটিল। আমাকে তাই শিল্পের গতিপথ হিসেবে রূপকে আশ্রয় নিতে হয়েছে। আবিষ্কার করতে হয়েছে সাহিত্যের নতুন রীতি। প্রাকৃত, অতিপ্রাকৃত, অলংকার, চিত্রকল্প, বাস্তব ইতিহাস, প্রতিইতিহাসের অন্য এক জগৎ। বাইবেলের আশ্রয়ে ছোটগল্পের অন্যরূপ নির্মাণ করতে হয়েছে। অন্যদিকে একাত্তরের বস্তু বিশ্ব এতই বিশাল যে, ওখানে গল্পাংশের যেনো প্লাবন। তাই আমি গতানুগতিক মুক্তিযুদ্ধের গল্প রীতিকে পাশ কেটে নতুন রীতির সন্ধান করেছি। নতুন রীতি এবং অভিনব শিল্প কৌশলের পথে হাঁটার চেষ্টা করেছি বিকল্প শিল্প জিজ্ঞাসার সঙ্গী হয়ে। একাত্তর এখানে উপাদান মাত্র, কিন্তু শিল্পের জিজ্ঞাসা গঠন কৌশলের কারণে সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপাশ্রয়ী হয়ে উঠেছে। মনে হবে একুশ আর একাত্তর পাশাপাশি হেঁটেছে একই শিল্প রীতির অনাবিষ্কৃত নতুন পথে।
হরিপদ দত্ত। জন্ম : ২ জানুয়ারি ১৯৪৭ খ্রি. গ্রাম : খানেপুর, উপজেলা : পলাশ, জেলা : নরসিংদী। উল্লেখযোগ্য উপন্যাস: অজগর, জন্মজন্মান্তর, দ্রাবিড় গ্রাম, মোহাজের, চিম্বুক পাহাড়ের জাতক (৪ খণ্ড) প্রভৃতি। গল্প সমগ্র, প্রবন্ধ সমগ্র ও শিশু-কিশোর সমগ্র প্রকাশিত হয়েছে। পুরস্কার : বাংলা একাডেমি পরিচালিত সাদ’ত আলী আকন্দ সাহিত্য পুরস্কার ২০০১ এবং বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০০৬ (উপন্যাস)।