"কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস"বইটির ভূমিকা: আমাদের এই পৃথিবী সম্পর্কিত প্রায় কিছু মাত্রই না বুঝে আমরা দৈনন্দিন জীবন-কর্ম অতিবাহিত করি। যে যন্ত্র থেকে সূর্যের এই আলাে উৎপন্ন হচ্ছে এবং এবং জীবন সম্ভবপর হচ্ছে, যে মহাকর্ষ আমাদের পৃথিবীর সাথে আটকে রাখে (তা না হলে পৃথিবী আমাদের লাটিমের মতাে ঘুরিয়ে মহাবিশ্বের স্থানে নিক্ষেপ করতাে] কিংবা যে পরমাণু দিয়ে আমরা তৈরি হয়েছি এবং যার স্থিরত্বের উপরে আমরা মূলগতভাবে নির্ভশীল, সে বিষয়ে আমরা কিছুই চিন্তা-ভাবনা করি না। চারপাশের এই প্রকৃতিকে আমরা যেমন দেখি, প্রকৃতি কেন তেমন হলাে, মহাবিশ্ব কোথা থেকে এলাে কিংবা মহাবিশ্ব কি সব সময় এখানে ছিলাে, কালস্রোত কি কখনাে পশ্চাদৃগামী হবে এবং কার্যকারণের পূর্বগামী হবে কিংবা মানুষের পক্ষে যা জানা সম্ভব তার কি একটা চরম সীমা (Absulate Limit) আছে? শিশুরা কেউই এ সমস্ত চিন্তায় বিশেষ সময় ব্যয় করে না। (শিশুদের জ্ঞান এতাে অল্প যে তারা এ গুরুত্বপূর্ণ জিজ্ঞাসাগুলাে না করে পারে না।) | অপরদিকে এমন কিছু শিশুর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঘটেছে, যারা প্রশ্ন করেছে ব্ল্যাকহােল দেখতে কেমন, পদার্থের ক্ষুদ্রতম অংশ কী? আমরা কেন অতীতই মস্তিষ্কে স্মরণ রাখি, ভবিষ্যৎ কেন স্মরণ রাখি না? আগে বিশৃঙ্খলা ছিলাে, এখন মনে হয় সেটা নেই- শৃখল রয়েছে, এ রকম কেন ঘটল? একটা মহাবিশ্বের অস্তিত্ব কেন এখনাে বর্তমান? | এখনাে আমাদের এই চিরায়ত সামাজিক রীতি হচ্ছে পিতা-মাতা কিংবা শিক্ষকরা এ প্রশ্নের জবাবে একটু ঘাড় বাঁকা করেন অথবা অস্পষ্ট ধর্মীয় ধারণার সহায়তা নেন। এ সমস্ত প্রশ্নে কেউ কেউ অস্বস্তি বােধ করেন। তার কারণ হলাে মানুষের বােধশক্তির সীমারেখা এসব প্রশ্নগুলাে বেশ স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দেয়। অপরদিকে দর্শন এবং বিজ্ঞানের অগ্রগতির অনেকটাই হয়েছে এ সমস্ত প্রশ্ন দ্বারা তাড়িত হয়ে। বয়স্কদের ভেতরে যারা এ সকল প্রশ্ন করতে ইচ্ছুক তাদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। অনেক সময় তারা কিছু আশ্চর্যজনক জবাব পান। পরমাণু এবং তারকা থেকে সমান দূরত্বে আমাদের অবস্থান। খুব ক্ষুদ্র এবং খুব বৃহকে নিয়ে আমাদের অনুসন্ধানের সীমারেখা আমরা বৃদ্ধি করছি। প্রতিনিয়ত। ভাইকিং মহাকাশযান মঙ্গলগ্রহে অবতরণের প্রায় দু বছর আগে অর্থাৎ ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের বসন্ত ঋতুতে আমি ইংল্যান্ডে লন্ডনের রয়াল সােসাইটির উদ্যোগে আহুত একটি সভায় হাজির ছিলাম। সভার উদ্দেশ্য ছিলাে পৃথিবী বহির্ভূত জীব অনুসন্ধান কীভাবে করা যায় সে বিষয় নিয়ে আলাপ-আলােচনা। কফি খাওয়ার ফাঁকে আমি দেখলাম, পাশের হলে আরাে অনেক বড় একটা সভা হচ্ছে। কৌতূহলের বশে আমি সেখানে প্রবেশ করলাম। | খুব দ্রুতই বুঝতে পারলাম যে, আমি একটা প্রাচীন রীতি দেখছি। পৃথিবীর প্রাচীনতম বিদগ্ধ জনসংগঠনগুলাের একটি রয়াল সােসাইটি। সেখানে নতুন ফেলাের অভিষেক ঘটছে। সামনের সারিতে হুইল চেয়ারে বসে একজন তরুণ খুব ধীরে একটি খাতায় নাম স্বাক্ষর
খায়রুল আলম মনির একজন লেখক, গবেষক ও বিজ্ঞান বিষয়ক বই লেখার জন্য বাজারে বেশ আলােড়ন সৃষ্টি করেছে। তিনি বয়সে একেবারে তরুণ । খুব অল্প সময়ের মধ্যে এতােগুলাে গ্রন্থ রচনা সত্যিই বিস্ময়কর। খায়রুল আলম মনির পড়াশােনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৯৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বি.এস.এস সম্মান এবং ১৯৯৫ সালে একই বিষয়ে এম.এস.এস ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এছাড়াও বেশ কয়েকটি একাডেমিক ডিগ্রি অর্জন করেছেন কৃতিত্বের সাথে । ভ্রমণ করেছেন বেশ কয়েকটি দেশ। তার মৌলিক রচনা প্রায় অর্ধশত। তার রচিত গ্রন্থাবলির মধ্যে রয়েছে- ‘জীবনের জন্য বিজ্ঞান : ছােটদের বিজ্ঞান নিয়ে খেলা আধুনিক বিশ্বের বিজ্ঞান : বিজ্ঞান নিয়ে ভাবনা’ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।