ভূমিকা ম্যাক্সিম গোর্কির অন্যসব সাহিত্যকর্মের মধ্যে ‘আমার ছেলেবেলা’ মূলতঃ তার আত্মজৈবনিক ধরনের লেখনী। তবে এটাকে শুধু আত্মজৈবনিক প্রবন্ধ বললে ভূল হবে। বরং বলা যায়- এটা এক ধরনের আত্ম জৈবনিক উপভোগ্য উপন্যাস। বইটিতে মধ্যযুগের সামন্ত শ্রেণীর শোষণ আর অত্যাচারের পাশাপাশি গণ মানুষের বৈষম্যমূলক জীবন যাপন প্রণালীর এক অনন্য বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। সেলুলয়েডের পাতায় চিত্রায়িত কাহিনী চিত্রের চেয়ে কোন অংশ কম নয় এই গ্রন্থের যাবতীয় অধ্যায়গুলো। এর ফলে পাঠকের কাছে বইটিতে কখনই একটি নরস আত্মজৈবনিক গ্রন্থ বলে মনে হবে না। বরং মধ্যযুগীয় পটভূমিকায় উপভোগ্য রচনা হিসেবে একটির পর একটি অধ্যায় পার হয়ে যাবেন পাঠকবৃন্দ। প্রধানত আমার ছেলেবেলা বইটি ম্যাক্সিম গোর্কির তিন খন্ডে প্রকাশিত আত্মজৈবনিক প্রন্থের প্রথম প্রথম খন্ড হিসেবে পরিচিত। অপর দুটি খন্ড হলো ‘পৃথিবীর পাঠশালা’ এবং ‘পৃথিবীর পথে পথে’। সবগুলো গ্রন্থই মধ্যযুগীয় সামন্ত প্রথা বনাম সাধারণ গণ মানুষের জীবন প্রণালীর পটভূমিকায় রচিত। সেই সময়ের রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, রাজনৈতিক বৈষম্য, সমাজ বৈকল্য ইত্যাদি অনায়াস স্বাচ্ছন্দ্যে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন ম্যাক্সিম গোর্কি। যা শুধু তার মতো লেখকের পক্ষেই সম্ভব। কারণ, ম্যাক্সিম গোর্কি গণ মানুষের কথা লিখতে গিয়ে শত অত্যাচার, দুঃখ-কষ্টকে হাসিমুখে বরণ করে নিয়েছেন। তৎকালীন অভিজাত শ্রেণীর বৈষম্যমূলক আচরণ তাকে বিরত রাখতে পারেনি। রুদ্ধ করতে পারেনি তার কলমকে। নিজের দেশের গণ্ডির বাইরে রুশ সাহিত্যকে তথা মধ্যযুগীয় গণ মানুষের জীবন কাহিনীকে তুলে ধরতে পেরেছেন সমগ্র বিশ্বব্যাপী।
(মার্চ ২৮, ১৮৬৮ – জুন ১৮, ১৯৩৬) বিখ্যাত রুশ সাহিত্যক। তিনি নিজেই তার সাহিত্যক ছদ্মনাম হেসেবে বেছে নেন 'গোর্কি' অর্থাৎ 'তেতো' নামকে। তার অনেক বিখ্যাত রচনার মধ্যে মা একটি কালজয়ী উপন্যাস। প্রথম জীবন মাক্সিম গোর্কি নিঞ্জি নভগরদ এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ৯ বছর বয়সে পিতৃমাতৃহীন হন। ১৮৮০ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি তার দাদীমাকে খুঁজতে গৃহ ত্যাগ করেন। ১৮৮৭ সালে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যান এবং দীর্ঘ ৫ বছর ধরে পায়ে হেঁটে সমগ্র রাশিয়া ভ্রমন করেন। তিনি ১৮ জুন ১৯৩৬ (৬৮ বছর) সালে মৃত্যু বরণ করেন।